
বাহার উদ্দিন বকুল, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, জেদ্দা, সৌদি আরব : আমরা বাংলা ভাষাভাষী, আমরা বাঙালি। নানা দিক থেকে গৌরবের মত আমাদের রয়েছে নানা বিষয়। রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জনের মত গৌরব এনেছে যেমন, তেমনি সার্বজনীন বাংলা নববর্ষ উৎযাপনও গৌরব করার মত একটি বিষয়। বিশ্বায়নের এ যুগে সারা বিশ্বে একরকম দিন তারিখ গণনা রীতি প্রচলিত হলেও বাংলা সন তারিখ বিলীন হয়ে যায়নি। ঋতু বৈচিত্রের হিসেব, বিভিন্ন পার্বণ, ফসল বোনা ও কাটাসহ নানাভাবে বাংলা দিন তারিখের ব্যবহার এখনও সামাজিকভাবে প্রচলিত রয়েছে। নববর্ষ মেলাতো রয়েছেই। এই নববর্ষ উদযাপনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো – এটাই বাঙালির একমাত্র সার্বজনীন উৎসব।
শাশ্বত বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করে জেদ্দার জনপ্রিয় বৈশাখী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠক। বসন্তের অপরুপ সৌন্দর্যকে নিয়ে বৈশাখী মেলা প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জেদ্দার আবহর আল নায়েফ পিকনিক স্পটে উদযাপিত হয়। শুক্রবার সকাল ১০টায় থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলায় রকমারি অনুষ্ঠান মালায় ছিল আনন্দের জোয়ার। পাশাপাশি বিকেলের মনোরম বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক শিশুদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান। ছিল অন্যান্য বারের মতো বাংলাদেশী হরেক রকমের আকর্ষনীয় খাবারের স্টল।
বৈশাখী উৎসবে জেদ্দা-মক্কার সর্বস্তরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গণের নেতৃবর্গ সপরিবারে অংশগ্রহণ করেন। ছিলেন সাধারণ প্রবাসীরাও। এ যেন প্রবাসীদের মিলনমেলা, প্রবাসে এক টুকরো বাংলাদেশ। দিনভর প্রবল খোলা সরস আড্ডা, নুতন প্রজন্মের উচ্ছাস, ছোটাছুটি, একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে জেদ্দা প্রবাসী বাংলাদেশীদের দিনটা বেশ আনন্দে কেটেছে।
মেলায় ছিল বিভিন্ন্ ধরনের দেশীয় খাবার ও পোশাকের স্টল। ছিল হরেক রকম পিঠা-পুলি, কাঁচা আমের ভর্তা, খিচুড়ি, ফুচকা, ঝালমুড়ি, চটপটি, হালিম, পান্তা ইলিশ, রকমারি ভর্তা, পেঁয়াজি, বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের পিঠা, পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, আলুর চপ, সহ নানান ধরণের বাংলাদেশী খাবার,আরও ছিল পান, দেশীয় পোশাক ও খাবারের স্বদেশী আমেজে ভরপুর ছিল স্টলগুলো। ছিল বৈশাখী-বরণ ব্যানার, ফেষ্টুন, পতাকা, ব্যান্ড এবং জেদ্দা প্রবাসী লেখকদের বই। আর স্টলের আনা এসব খাবার ঘরে তৈরি করেছিলেন জেদ্দায় বসবাসরত ভাবি ও বোনেরা।
কনসাল জেনারেল এফ, এম বোরহান উদ্দিনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ স্টল সমূহ পরিদর্শন করেন। এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কনসাল জেনারেল,
মেলায় উপস্থিত সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। প্রবাসে সুস্থ্য বিনোদন, সুন্দর জীবন ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বৈশাখকে বরণ করতে বাংলা স্কুল এবং ইংরেজি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এবং জেদ্দার সাংস্কৃতিক অঙনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শারতাজুল আলম দিপু, ফজলুল কবির ভীকু, মাহ্ফুজউর রহমান, মিজানুর রহমান, সেলিম, স্নেহা, জিন্নু, তমা, ইশিতা, মুনা, লিসা, সামি, রিয়াজ, মিনহা, শিউলি, রাওয়াজ, নুর উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন সরকার, হীরা। তারা সকলে মিলে একটি সুস্থ্য বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপহার দেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র। এ ছাড়া ভাবী ও বোনদেরকে দেওয়া হয় বিশেষ পুরষ্কার, মুখরোচক খাবার নিয়ে আসার জন্য।
সব শেষে সংগঠনের সভাপতি, মাহফুজ-উর রহমান, আয়োজক কমিটির সকল নেতৃবৃন্দকে পরিচয় করিয়ে দেন, সভাপতি, মাহফুজউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক, সারতাজুল আলম দিপু, মতিউর রহমান বাচ্চু, আবু নাইম, জসিম উদ্দিন, বাহার উদ্দিন,বকুল, রেজাউল করিম, শাহ্ আলম, মরতুজাসহ, উপস্হিত সবাইকে সীমাবদ্ধতার মাঝেও বৈশাখী উৎসব স্বার্থক করার জন্যে জেদ্দা মক্কার সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং মিডিয়া প্রতিনিধিগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং সবার সুস্বাস্থ্য, সুখ ও শান্তি কামনা করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি যৌথ ভাবে পরিচালনা করে,জাহারা হক ও মারওয়া ওয়াজিউল্লা।