দেলোয়ার হোসেন সুমন, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, মদিনা মনোওয়ারা, সৌদি আরব : ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে হাসি আনন্দ- যারা প্রবাসে থাকেন তাদের নিজেদের চেয়ে পরিবারের ঈদ নিয়ে বেশি ভাবেন। বিশেষ করে ঈদ এলে স্বজনদের কেনাকাটার জন্য আলাদাভাবে টাকা পাঠাতে হয়। আর এই বাড়তি টাকা আসে বাড়তি পরিশ্রম থেকে।অথবা কারো থেকে ঋণ করে পাঠান- অনেকে প্রবাসে পরিবারের সঙ্গে থাকলেও দেশে মা’বাবা ভাই বোনের ঈদ উপলক্ষে আলাদা খরচ পাঠান।
যাদের ভালো চাকরি আছে তাদের হয়তো অসুবিধা তেমন হয় না। কিন্তু যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল’ ট্যাক্সি চালক, ক্লিনার কিংবা ট্রাকে (লোড’আনলোডের) মাল ওঠা-নামার কাজ করেন তাদের জন্য অনেক কষ্ট এই বাড়তি আয় করা। আমি এই সব ভাইদের সালাম জানাই। তারাই মূলত বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের যোদ্ধা। দেশের অর্থ সচ্ছল তাদের জন্যে । এতো কষ্ট করেও তাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ থাকে না। দেশে ফোন করে শুধু জিজ্ঞেস করেন। মা অথবা বাবা’কে ঈদের কেনাকাটা জন্য টাকা দিয়েছি পরিবারের সবাইকে নিয়ে কেনাকাটা করে নিও। আর প্রবাসীদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ঈদের দিনও কাজ করে দিন পার করতে হয়। সারা দিন কাজ করে ডিউটি শেষে ভাবেন আজ ঈদের দিন কাজে কাজে শেষ হয়ে গেলো-আহহ দেশের অনেক মানুষের ধারণা, বিদেশে বুঝি ডলার’ রিয়াল’ দিনার ওড়ে, প্রবাসে গেলেই ধরা যায়। হ্যাঁ, ধরা যায় ঠিক, তবে গায়ের রক্ত পানি হয়ে যায় পরিশ্রম করতে করতে এক সময় নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হয় ।
অনেকে বাহিরে অতিরিক্ত আয় করার জন্য কাজ করে আর এই সুযোগটাই মালিক কাজে লাগান। ভয় দেখান পুলিশকে ধরিয়ে দেওয়ার। কিছুদিন পর পর টাকা চেয়ে বসেন-টাকা না দিলে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু এই কষ্টগুলো অনেক প্রবাসী দেশে পরিবারের কাছে শেয়ার করেন না। ভেবে থাকেন, চিন্তা করবে। আর কাজ না করে দেশে ফিরে গিয়েই বা-কী করবেন। কারণ বেকার জীবনের অবসান ঘটাতে তো এই বিদেশ আসা। এখন ফিরে গেলে সেই বেকার জীবন অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। এর চেয়ে এই অল্প বেতনে কাজ করি সেই ভালো। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে এইরকম বেশি সমস্যায় পড়েন প্রবাসীরা। তারা না পারেন সইতে না পারেন কইতে।
অনেকে আছেন এই কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করার মতো ধৈর্য থাকে না। জীবনের কঠিন সময়টা তিনি পার করেন অনেক কষ্টে। অনেকে জানেন না, সময়, পরিস্থিতি, বাস্তবতার মধ্যে অক্টোপাসের মতো আটকে থাকেন। পরিবারের মানুষগুলোকে আর বুঝিয়ে বলতে পারেন না তার সমস্যার কথা। একসময় ধিক্কার শুনতে হয়। তখন ছুটিতে দেশে যাওয়ার আর আগ্রহ থাকে না। তবে ডলার রিয়াল ঠিকই পাঠান ঈদ এলে। ভাবেন আমি না হয় দেশে নাই যাই, অন্তত আপনজনেরা ভালো ভাবে ঈদ করুক। আর কষ্টগুলো মনের সিন্দুকে চাপা পড়ে থাকে। কোনো এক বিকেলে অবসরে মনে করে হু হু করে কেঁদে ওঠেন। সেই চোখের পানি কেউ দেখেন না। সেই কষ্ট তিনি একাই লালন করেন। ঈদ তিনি প্রবাসে করেন ঠিকই, মন পড়ে থাকে দেশে।
অনেকে ঈদ করতে দেশে যান, অনেক বছর, প্রবাসে কাটিয়ে ভাবেন দেশে গিয়ে ঈদ করব, তো সেই সময়টা ছুটি নেন। দেশে বেড়াতে গিয়ে দেখেন টিনের চালা থেকে নতুন দালান হয়েছে, ফার্নিচার সব ঝকঝকে। কিন্তু ততদিনে মা নেই বা বাবা নেই। মায়ের সেই মুখখানি মনে পড়ে, মনে পড়ে সকালে ঈদের সেমাই খেয়ে বাবার সঙ্গে ঈদের নামাজে যাওয়ার কথা। ক্ষুধা লাগলে দৌড়ে এসে বলতেন, মা ভাত দাও ক্ষুধা লাগছে। ডাইনিং টেবিলে বসে ফ্যানের বাতাসে শরীর জুড়ালেও মায়ের কথা মনে করে অথবা বাবার কথা মনে পড়ে, তখন শূন্য লাগে চারপাশ। ঈদের আনন্দটা আর আনন্দ থাকেনা নিঝুম হয়ে ঝরে চোখের জল।
আর যাদের বাবা-মা থাকেন তারা আনন্দের সঙ্গেই ঈদ করে ছুটি শেষে ফিরে আসেন। প্রবাসে নিজ কর্মস্থলে।
তারা সবচেয়ে ভালো আছেন যারা পরিবার নিয়ে থাকেন। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। তারা চেষ্টা করেন ঈদ আনন্দের সঙ্গে করতে। নিজ এলাকায় পরিচিত বাঙালি থাকলে তাদের নিজের বাসায় দাওয়াত করেন ঈদের দিন। পরিচিত সবাই একসঙ্গে হয়ে ঈদ উদ্যাপন করেন। ভাবেন এই যান্ত্রিক জীবনে অন্তত একটা দিন সবাই মিলেমিশে থাকি। এরেই নাম প্রবাস ঈদ আনন্দের হলেও শুধু প্রবাসীরা নিজেকে জ্বালিয়ে সবাইকে আলোকিত করে আনন্দ দিয়ে থাকে। আবেগ দিয়ে কখনো মূল্য দেয়া যায়না সকল প্রবাসী দেশের সূর্য সন্তান। স্যালুট সকল প্রবাসী’কে।