গাইবান্ধা,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: জনবল সংকটের অজুহাতে কয়েক বছর থেকে পঞ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট-সান্তাহার সেকশনের ১২টি স্টেশন বন্ধ (ক্লোজড ডাউন) করা হয়েছে। ওই স্টেশনগুলোর টিকেট কাউন্টার বন্ধ থাকায় যাত্রীরা টিকেট করতে পারছেনা। বিনা টিকেটে তার ট্রেন ভ্রমণ করছে। স্ট্রেশনে রেলের সংকেত দেয়ার কেউ না থাকার কারণে প্রতিনিয়িত দুর্ঘটনা বাড়ছে।
ফলে ওইসব স্টেশনে সকল প্রকার বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রতিবছর কমপক্ষে ৭ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে রেল অধিদফতর বঞ্চিত হচ্ছে। বন্ধ ঘোষণা করা এসব রেল স্টেশন চালু করার কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
লালমনিরহাট-সান্তাহার সেকশনে মোট ২৬টি রেল স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে মহেন্দ্রনগর, চৌধুরী রাণী, হাসানগঞ্জ, নলডাঙ্গা, কামারপাড়া, কুপতলা, বাদিয়াখালী, মহিমাগঞ্জ, সুখানপুকুর, আলতাফ নগর, নশরতপুর ও পাঁচপীর মাজারসহ ১২টি স্টেশন বিভিন্ন পর্যায়ে ক্লোজড ডাউন করা হয়েছে।
এরমধ্যে নলডাঙ্গা, কামারপাড়া, বাদিয়াখালি ও মহিমাগঞ্জ স্টেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্রে অবস্থিত এগুলোতে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় আসতো। এ রুটে চলাচলকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ২১-আপ ও ২২-ডাউন পদ্মরাগ এক্সপ্রেস ছাড়া বাকি সব ট্রেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে চালু রয়েছে।
বেসরকারি পরিচালিত ট্রেনগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্লোজড ডাউন স্টেশনে তাদের নিজস্ব স্টাফ যথারীতি দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কোন স্টাফ সেগুলোতে নেই। ফলে সেখানে রেল কর্তৃপক্ষ পরিচালিত ট্রেনের টিকেট কাটতে না পেরে নানামুখী সমস্যায় পড়ছেন ট্রেন যাত্রীরা।
এসব ক্লোজড ডাউনকৃত স্টেশনগুলোতে মধ্যে আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস শুধু থামে না। বাকি লোকাল ও আন্তঃনগর সবগুলো ট্রেন যথারীতি এসব স্টেশনে থামে। ফলে ক্লোজড ডাউনের কারণে যাত্রীরা এসব স্টেশনে টিকিট কাটতে পাড়ছে না। বিকল্প চলাচলের সুযোগ না থাকায় বিনা টিকিটেই ট্রেনে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন। এজন্য তারা অনেক ক্ষেত্রেই ট্রেনে উঠে রেল কর্মীদের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জনবল সংকটসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে বেশ ক’টি ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন নতুন করে সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে স্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়া অর্থাৎ “ক্লোজডাউন”।
বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের সান্তাহার-লালমনিরহাট সেকশনের ২৬টি স্টেশনের মধ্যে বর্তমানে ১২টি স্টেশনই বন্ধ হয়ে আছে। প্রতি মাসেই বিভিন্ন স্টেশনে মাস্টার, পোর্টার, পয়েন্টসম্যান অন্যান্য কর্মচারীরা অবসর গ্রহণ করলেও নতুন নিয়োগ তেমন না দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে ক্লোজ ডাউনকৃত স্টেশনগুলোতে কোন স্টাফ না থাকায় ট্রেন আসার সংকেত দেয়ার কেউ থাকে না। ট্রেনগুলো নিয়ম মাফিক আসছে, স্টেশনে থামছে এবং যথারীতি চলে যাচ্ছে। টিকিট নেয়ার কেউ নেই, দেখারও কেউ নেই।
এ অবস্থা চলছে ক্লোজড ডাউন স্টেশনগুলোতে। এতে স্টেশনে স্টেশনে দুর্ঘটনাও ঘটছে। অপরদিকে প্রতিমাসে এক একটি স্টেশন লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেল বিভাগ।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাটের বিভাগীয় ট্রাফিক তত্বাবধায়ক (ডিটিএস) মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নানা কারণে রেল বিভাগ জনসংকটের মুখে রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী লোক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। শীঘ্রই এসব সমস্যা কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।