নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: রাজধানীতে এবার ভাটারা ও শাহজাহানপুরে দুই শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ভাটারায় শনিবার রাতে ১২ বছরের এক শিশুকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শাহজাহানপুরে গত রাতে আরেক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। শনিবার রাতেই ভাটারায় ধর্ষিত শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমান হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রেখে তার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, মেয়েটির শরীরে মারধর ও নিপীড়নের আলামত রয়েছে। তবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ সে এখন অসুস্থ। ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিপীড়িত শিশুটি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশুনা করে।
এদিকে এ ঘটনায় শিশুটির পিতা গতকাল দুপুরের দিকে বাদী হয়ে ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছেন। পরিবারের অভিযোগ, সকাল থেকেই মামলা না করার জন্য আসামি পক্ষ হুমকি দিয়ে আসছিল। মেয়েটির ভাই জানান, শনিবার সন্ধ্যার দিকে তার দুই বোন ওই এলাকারই তাদের এক বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে যায়। পরে সেখান থেকে রাত ৮টার দিকে তারা বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে ছোট বোনকে ডেকে নেয় এলাকার এক যুবক। পরিচিত ভেবে বড় বোন একাই বাড়ি ফেরে।
ছোট বোনের কথা জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, রাস্তায় এক ব্যক্তি তাকে ডেকে নিয়ে গেছে। পরে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে পরিবারের লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েন। রাত ১০টার দিকে ছোট বোন বাসায় ফিরে আসে। এ সময় তার শরীর, চোখ-মুখ ফোলা ছিল। মেয়ের এই অবস্থা দেখে বাবা ডেকে জিজ্ঞেস করলে সে কান্নাকাটি করে সব ঘটনা বর্ণনা করে। মেয়েটির ভাই জানায়, তার বোনেরা জানিয়েছে, বাসা থেকে বের হওয়ার পরই নাজমুল ও শাহিন নামে দুই যুবক তাদের অনুসরণ করছিল। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটবে তা তারা বুঝতে পারেনি। তিনি বলেন, রাত ১০টার দিকে তার ছোট বোন ফিরে এসে জানায়, বান্ধবীর বাসা থেকে ফেরার পথে ভাটারার নুরের চালা এলাকায় ১০০ ফুট রাস্তার পাশ থেকে শাহিন তাকে ডেকে নেয়। বড় বোন বাসায় চলে যাওয়ার পর শাহিন (২৫) ও নাজমুল তাকে মারধর করে। মুখ চেপে ধরে সমির উদ্দিন মার্কেটের নিচেই একটি গোডাউনে নিয়ে যায়। সেখানে রাশেদ তাকে মারধর ও ধর্ষণ করে। পরে এ কথা কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেয়।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটির ভাই আরো জানান, তার বোন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু লেখাপড়ায় কিছুদিন বিরতি যাওয়ায় তারা আবারো তাকে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করে দিয়েছেন। এ ঘটনা জানার পর রাত একটার দিকে মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওসিসির সমন্বয়ক ড. বিলকিস বলেন, তিনি ভুক্তভোগী শিশুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তার বয়স ১৪ বছরের কাছাকাছি। মেয়েটি স্কুলে পড়ে বললেও কোন শ্রেণিতে এবং তার ফাইনাল পরীক্ষা কবে, এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। ভিকটিমের শরীরে মারধরের চিহ্ন আছে। তার পরিবারের অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। মেয়েটির শারীরিক ক্ষত বেশ গুরুতর বলেও তিনি জানান।
হাসপাতালে মেয়েটির ভাই জানান, রাশেদের ভাই স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা বার বার তাদের ফোনে হুমকি দিচ্ছে এবং বলছে, থানায় গিয়ে মামলা করবি কিছুই হবে না আমাদের। তোরা আমাদের কিছুই করতে পারবি না। এমনকি ওই নেতা তার বাড়ির ম্যানেজার জয়নুদ্দিনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠিয়েছে তাদের খোঁজ নেয়ার জন্য। আমি সরকারের কাছে আমার বোনকে নির্যাতনের বিচার চাই। চার-পাঁচ বছর আগে তাদের ডেকোরেটরের দোকান ভাঙচুর করে বলেও তিনি জানান।
এদিকে জয়নুদ্দিন ঢামেক হাসপাতালে এলে সাংবাদিকদের জেরার মুখে পড়েন। তাকে কে পাঠিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেতা পাঠিয়েছেন এবং মেয়ের বাবাও আমার বন্ধু সেই হিসাবে দেখতে এসেছি। এ ছাড়া হাসপাতালে দেখতে আসেন গুলশান জোনের ডিসি খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত রাতেই আমরা সংবাদ পেয়েছি। আসামি যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর জানান, গতরাতে (শনিবার) মেয়েটি ঢাকা মেডিকেলে এসেছে। রোববার ভোরে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের আঘাত রয়েছে। সে ধর্ষিত হয়েছে কিনা ফরেনসিক পরীক্ষা করার পর জানা যাবে। বর্তমানে সে অসুস্থ থাকায় পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় গতকাল মেয়েটির পিতা বাদী হয়ে ভাটারা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভাটারা থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম। মামলায় আসামি করা হয়েছে শাহিন, নাজমুল ও রাশেদকে।
অন্যদিকে শাহজাহানপুরে ধর্ষিত শিশুর বয়স ৭ বছর। রক্তাক্ত অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তি করেছে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শাহজাহানপুর থানাধীন শান্তিবাগের ২৬৮, নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতো ওই শিশু। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে ওই শিশু পাশের বাড়িতে আরবি পড়ে বের হওয়ার সময় এক যুবক তাকে ফুঁসলিয়ে পাশের একটি ফাঁকা স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই বাচ্চু মিয়া ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সূত্র: মানবজমিন,প্রথম পাতা,স্টাফ রিপোর্টার | ৩১ অক্টোবর ২০১৬, সোমবার