নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান এলাকায় পরপর একই কায়দায় তিন খুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি কিংবা চক্রকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে তিন খুনে জড়িতরা ‘সিরিয়াল কিলার’, গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এজন্য পুলিশ মাইকিং করে সচেতন হতে বলেছে এলাকাবাসীকে।
কিলারকে চিহ্নিত করতে ১০ ঘণ্টার ফুটেজ সংগ্রহ ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানিয়েছে, সে বাড়ি ভাড়া নেয়ার কথা বলে বাসায় ঢোকে। গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে ফ্ল্যাট দেখতে যায়। আর ফ্ল্যাটে গেলেই পেছন থেকে গৃহকর্ত্রীর মাথা ও ঘাড়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায়।
ওই অজ্ঞাত খুনি সম্পর্কে ভিডিও ফুটেজের একটি কপি এসেছে গণমাধ্যমের কাছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তার বয়স ২৩ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৬/৭ ইঞ্চি। গায়ের রং ফর্সা। মাথায় চুল ছোট। পোশাকে ফরমাল ওই যুবককে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চলাফেরা করে।
দক্ষিণখান থানা, গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব-১ সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় মাসে ওই এলাকায় একই কায়দায় তিন নারী খুন এবং এক নারী গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে আছে। হতাহত ওই চার নারীই ধনাঢ্য পরিবারের মধ্যবয়সী গৃহকর্ত্রী।
গত ২৪ জুলাই দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইরে গৃহকর্ত্রী শাহিদা বেগমকে (৫০) খুন করে তার সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় খুনি। হত্যার পর পুলিশের ধারণা ছিল, ডাকাতি বা পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
তবে মাস খানেক পর ২১ আগস্ট পূর্ব মোল্লারটেকের তেঁতুলতলার ১১৪ নম্বর বাসায় একইভাবে খুন হন সুরাইয়া বেগম (৫৫) নামে আরেক গৃহকর্ত্রী।
এরপর ৩১ আগস্ট দক্ষিণ আজমপুরের এ ব্লকের ৩/এ রোডের ৮১/৩৯ নম্বর বাড়িতে জেবুন্নিসা চৌধুরীকে (৫৫) একইভাবে কুপিয়ে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় ওই ব্যক্তি। জেবুন্নিসা এখন ধানমণ্ডির গ্রিনলাইফ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকেলে দক্ষিণখানের গাওয়াইরের দক্ষিণপাড়ায় ৪৮ বছর বয়সী ওয়াহিদা আক্তার একই স্টাইলে খুন হন। আগের দুই খুন ও এক আহতের ঘটনা কূল-কিনারা যখন করতে পারছিল না পুলিশ, তখনই নতুন এ খুনের ঘটনা ঘটে।
নিহতের দেবর ইলিয়াস মজুমদার জানান, বিকেলে ৬তলা বাড়ির দোতলায় গিয়ে বাড়ি ভাড়ার কথা বলে এক যুবক। গৃহকর্ত্রী ওয়াহিদা তাকে নিয়ে ফ্ল্যাট দেখাতে যান। কিছুক্ষণ পর পরিবারের সদস্যরা গিয়ে দেখেন, ওয়াহিদার রক্তাক্ত দেহ।
চারটি ঘটনা বিশ্লেষণ করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুনি প্রশিক্ষিত। দেখলে ভদ্র এবং চাকরিজীবী বলেই মনে হবে। সঙ্গে থাকা ব্যাগেই ধারালো অস্ত্র বহন করে।
দক্ষিণখান থানার ওসি সৈয়দ লুৎফর রহমান বলেন, পরপর তিন খুনসহ চার ঘটনায় এক যুবক জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। সেগুলো বিশ্লেষণ করে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পুরো ১০ ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ৫২ সেকেন্ডের সারসংক্ষেপ সিডি প্রস্তুত করা হয়েছে। সন্দেহভাজন যুবকই যে সিরিয়াল কিলার সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত। কিলিং মিশনে ব্যবহৃত কয়েকটি মোবাইলফোন নাম্বার ট্রেস করা হচ্ছে। কয়েকটি সচলও পাওয়া গেছে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, কিলারের সঠিক নাম পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দক্ষিণখানের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। নিশ্চিত হওয়া গেলেই আটক করা সম্ভব হবে।