নরসিংদী প্রতিনিধি,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: নরসিংদীর মনোহরদীতে সার্টিফিকেট না দেয়ায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ে বিষ খেয়ে আত্ম হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন শহিদুল ইসলাম (১৯) নামে এক শিক্ষার্থী। মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে মনোহরদী উপজেলা হরি নারায়নপুর ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। সার্টিফিকেট প্রদানকে কেন্দ্র করে ঘুষ দাবী অভিযোগ উঠেছে মাদ্রসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে মাদ্রসার অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন। পুলিশের পাশাপাশি তাকে আটক করতে মাঠে নেমেছেন এলকাবাসী। এদিকে অভিযোগ প্রমানিত হলে মাদ্রসা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয় হবে বলে জানিয়েছে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
শিক্ষার্থীর পরিবার ও মাদ্রাসা সূত্রে জানাযায়, ২০১৬ সালে মনোহরদী উপজেলার হরিনারায়নপুর ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রসা থেকে আলেম পরীক্ষা দেন দৌলতপুর ইউনিয়নের কেরানীনগর গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে শহিদুল ইসলাম। এবং ভাল ফলাফল নিয়ে সে পাশ করেন। উচ্চ শিক্ষার আশায় গ্রামের দরিদ্র শহিদুল মনোহরদী ডিগ্রি কলেজে অনার্স ভর্তির জন্য আবেদন করেন। উক্ত কলেজ তাকে ভর্তির জন্য সিলেক্ট করেন। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী অনার্স ভর্তির জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানে আলেম পাশের সার্টিফিকেট জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু গত এক মাস যাবৎ মাদ্রসা’র অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মৌলবী’র কাছে সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য ধরনা দিচ্ছেন । কিন্তু সে শহিদুলকে আলেম পাশের সার্টিফিকেট দিতে রাজি হচ্ছেন না। সর্বশেষ গত সপ্তাতে সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য শহিদুলের কাছে তিন হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে দরিদ্র এই শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের চাহিদা মতো তিন হাজার টাকা যোগার করতে পারেনি। অবশেষ কৃষি কাজ করে পাঁচশত টাকা তুলে দেন অধ্যক্ষের কাছে। এতে তিনি সার্টিফিকেট দিতে রাজি হয়নি। এদিকে গতকাল শনিবার মনোহরদী ডিগ্রি কলেজে অনার্স ভর্তি পরীক্ষার শেষ দিন ছিল। তাই পুনরায় সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে মাদ্রসায় যায় শহিদুল। কিন্তু তিন হাজার টাকা না দিলে সার্টিফিকেট দেয়া হবে না বলে শিক্ষার্থী শহিদুলকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। সার্টিফিকেট না দিলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে জানান শহিদুল। পরে কোন ভাবেই সার্টিফিকেট না নিতে পেরে মনের দুঃখে অধ্যক্ষের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে মাদ্রসার শিক্ষকরা তাকে উদ্ধার করে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। এদিকে শিক্ষার্থী বিষ খেয়ে আত্মহত্যার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফুসে উঠেন তার গ্রামের বাসিন্দারা। অজ্ঞান হয়ে যায় তার মা।
অসুস্থ্য শিক্ষার্থীর চাচাতো ভাই জামাল বলেন,ছোট বেলা থেকেই উচ্চ শিক্ষা স্বপ্ন দেখতেন শহীদুল। নুন আনতে পান্তা ফুরালেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু আলেম পাশের পর ভর্তির জন্য সার্টিফিকেট প্রদান করছিলেন না মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তাই মনের দুঃখে বিষ পান করেন। তার অবস্থা আশংকা জনক। তাই তাকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বলেন,ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী। অনার্স ভর্তির জন্য তাকে সার্টিফিকেট দিচ্ছিলনা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। নিয়ম বর্হিভূত ভাবে তা আটকিয়ে রেখে ছিল। পরে সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য আমি তাকে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি শোনেন নি। তিনি তিন হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। ৫শ টাকা দেয়ার কথা বলওে তিনি রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান,অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন অতন্ত্য দূর্নীতিবাজ একজন অধ্যক্ষ। টাকা ছাড়া শিক্ষার্থী নয় কোন শিক্ষকের কাজও সে করেন না। তার সামনে ছেলেটা বিষ খেলেও, পাষন্ড অধ্যক্ষ তাকে একবারও বাধা দেয়নি । তার কাছে টাকাই সব।
এদিকে ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে ঘা ঢাকা দিয়েছে মাদ্রসার অধ্যক্ষ। একাদিক বার তার ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭১৮ ৮০৭৮৪৯ নম্বরে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ( তদন্ত) মেহেদী মাসুদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। পুলিশ ও এলকাবাসী মিলে তাকে খুজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ হক নিরু বলেন,শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে টাকা নেয়ার কোন বিধান নেই। এটা আমি প্রথম শুনেছি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে মাদ্রাসা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।