
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, রিয়াদ – বাহার উদ্দিন বকুল, জেদ্দা, সৌদি আরব : আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে রিয়াদে সৌদি প্রবাসীদের সচেতন করার লক্ষ্যে দূতাবাস বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এতে প্রবাসীরা তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের কনস্যুলাররা। এতে রিয়াদে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য দিনটির তাৎপর্য বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল সেন্টার আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি ও বিনামূল্যে প্রবাসীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
এক আলোচনা সভায় বক্তারা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে উপযুক্ত জনবল না থাকায় প্রবাসীরা সময়মত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, একমাত্র সৌদি আরব থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ সবচেয়ে বেশি থাকার পরেও তাদের নির্দিষ্ট সেবা দানে দূতাবাসে উপযুক্ত জনবল নেই।
তারা অভিযোগ করেন, দূতাবাসে নিজস্ব আইনবিদ না থাকায় বিভিন্ন মামলায় বছরের পর বছর জেলে আটকে থাকা প্রবাসীরা দেশে ফেরত যেতে পারছেন না। এমনকি আইনগত পাওনা পরিশোধ না হওয়ার কারণে মৃতব্যক্তির লাশ সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবৎ পরে আছে অথচ দূতাবাসে আইনবিদের অভাবে সময় মত এর সুষ্ঠ সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না।
বক্তারা সৌদি আরবের বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে পালিয়ে এসে দূতাবাসে আশ্রয় নেওয়া গৃহকর্মীদের মানবেতর অবস্থার কথা ইঙ্গিত করে সৌদি আরবে নারীকর্মী না পাঠানোর পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি দূতাবাসের ডিপুটি চিফ অব দি মিশন ড. মো. নজরুল ইসলাম ইতিমধ্যে বিষয়গুলি পর্যালোচনা আকারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে পাঠানো হয়েছে বলে জানান।
অনুষ্ঠানে অভিবাসী দিবস রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণসহ ঢাকা মেডিক্যাল সেন্টার আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি এবং বিনামূল্যে প্রবাসীদের জন্য চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এতে আলোচনায় অংশ নেন ডা. শাহআলম, গোলাম মহিউদ্দিন, আব্দুস সালাম, এম আর মাহবুব, ডা. আরিফুর রহমান এবং শফিকুল আলম ফিরোজসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দূতাবাসের শ্রম-কাউন্সেলর সারোয়ার আলম।
এদিকে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেদ্দায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে আন্তৰ্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০১৬। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেদ্দা কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল এ কে এম শহিদুল করিম। কনস্যুলেট কর্মকর্তাবৃন্দসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন কনসাল রেজায়ে রাব্বীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন শরিফ থেকে তেলাওয়াত এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয় ।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি , প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বানী হুবহু পাঠ করে শুনান যথাক্রমে কাউন্সিলর হজ্জ মাকছুদুর রহমান,কাউন্সিলর শ্রম আমিনুল ইসলাম, সোনালি ব্যাংক প্রতিনিধি সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, কনসাল হজ্জ জহিরুল ইসলাম, কনসাল পাসপোর্ট এন্ড ভিসা কামরুজ্জামান ।
কনসাল জেনারেল এ কে এম শহিদুল করিম বলেন, অভিবাসীদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার প্রয়াসে ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালনের ঘোষণা দেয়। মূলতঃ ক) বিশ্ব উন্নয়নে অভিবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি ও মর্যাদা দান; খ) পরিবার পরিজনসহ অভিবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ; গ) অভিবাসীদের নিবিঘ্নে চলাচলের নিশ্চয়তা এবং ঘ) অভিবাসীদের আবাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাই দিবসটি মূল লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালে ১,০৫,৫৬ জন বাংলাদেশী কর্মীকে আইনি সেবা প্রধান করা হয়েছে এবং শ্রম আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে ৩,৫৪৭ জন বাংলাদেশী কর্মীর ৪৫ লক্ষ সৌদি রিয়াল যার সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকায় ৯.৫ কোটি যা বেতন পাওনা টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ২২২ জন অসুস্থ ও বিপদগ্রস্থ কর্মীকে ২,৩৮,২৭৫.৫৭ টাকা অর্থ সাহায্য প্রদান করা হয়েছে।
স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক গ্রেফারকৃত ১৩,৫৮৯ জন ডিপোর্টেশন ক্যাম্প/ জেলখানা হতে মুক্ত করে দেশে প্রেরণ করা হয়েছে। ৭০৮ জন মৃত বাংলাদেশের লাশ (পরিবারের সম্মতির ভিত্তিতে) স্থানীয় ভাবে দাফন/বাংলাদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মৃত ও দেশে প্রত্যাবর্তিত মোট ৩৮জন কর্মীর নিয়োগকর্তার নিকট থেকে তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা বাবদ ৫,৯৩,৫৫৮.০০ সৌদি রিয়াল যার সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকায় ১,২৩,৯৩,৯০৬.৫৩ টাকা এবং চূড়ান্ত ভাবে নিষ্পত্তিকৃত। ৯টি মৃত্যু জণিত ক্ষতিপূরণ মামলায় মোট ১৮,২৫,০০০.০০ সৌদি রিয়াল যার সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকায় ৩,৮১,০৭,২৭৭.৫০ টাকা আদায় করে তাদের ওয়ারিশদের নিকট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সৌদি সরকার বাংলাদেশ হতে বিভিন্ন পেশার লোক নিয়োগ শুরু করেছেন। প্রবাসীদের কাছে অনুরোধ করে শহিদুল করিম বলেন, সৌদি আরবের আইন-কানুন,সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলুন, সবসময় সুন্দর আচরন,সততা,আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার আহ্বান জানান। জেদ্দা প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীগন যে কোন সমস্যায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সহযোগিতা গ্রহন করুন। নিয়োগকর্তা তার কোম্পানির বা কফিলের সাথে ইকামা,বেতন,ছুটি,কাজ সক্রান্ত সমস্যা হলে কাজ বন্ধ করা বা ধর্মঘট করা যাবেনা।কারন সৌদি আরবে ধর্মঘট করা নিষিদ্ধ।আপনার নিয়োগ কর্তার সাথে যে কোন ধরনের সমস্যা হলে পুলিশ, আদালত বা কনস্যুলেটের মাধ্যমে আইনগতভাবে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।কোন সৌদি নাগরিকদের সাথে কোন ধরণের সমস্যায় জড়াবেননা।এরপর প্রবাসীদের শান্তি কামনাসহ দেশের উন্নতি-অগ্রগাতি কামনায় মোনাজাত করা হয়।