
প্রতিনিধি, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, ঢাকা : সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, সংবিধানে বর্ণিত আছে জনগন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। আর সেই জনগনের আকাংখা পূরন না হলে তো সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়।
নির্বাচন হতে হবে জনগনের আকাংখা পূরনের লক্ষে। তিনি বলেন, জনগনের আকাংখিত অবাধ-নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন
একটি নিরপেক্ষ সরকার বা জাতীয় সরকার। নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্ব শর্ত শক্তিশালী ইসি নয়, নিরপেক্ষ বা জাতীয় সরকার।
শুক্রবার সেগুনবাগিচাস্থ স্বাধীনতা হল মিলনায়তনে বাংলাদেশ নিউ জেনারেশন পার্টি-বিএনজিপির ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে “আগামী জাতীয় নির্বাচন ও জনপ্রত্যাশা” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পার্টির সভাপতি জাহিদ ইকবালের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকমল বড়ুয়া, সাবে এমপি গোলাম মাওলানা রনি, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, এনডিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য মো: মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মোহাম্মদ হানিফ, ঘুরে দাড়াও বাংলাদেশের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, কবি সুলতান আহমেদ বিশ্বাস, পার্টির সহ-সভাপতি আরাফাত মাহমুদ, যুগ্ম সম্পাদক মো: সাইফুল ইসলাম, নুর আলম সিদ্দিকী মানু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো: মনিরুল ইসলাম, নির্বহী সদস্য মাহফুজুর রহমান রাহাত প্রমুখ।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, নিরপেক্ষ বা জাতীয় সরকারের দাবী আদায় করতে পারলেই কেবল শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব। দলীয় সরকারের অধিনে কোন নির্বাচন কমিশনারই নিরপেক্ষ বা শক্তিশালী হতে পারবে না। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী অর্ন্তবর্তিকালীন সরকারের অংশগ্রহনের মাধ্যমে তৎকালীন বিরোধী দলের উচিত ছিল নির্বাচনে অংশগ্রহ করা। সেই প্রস্তাব না মেনে ও নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি চরম ভুল করেছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খুবই সিমিত। রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরমর্শ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তাই রাষ্ট্রতির উচিত প্রধানমন্ত্রীর দেয়া তালিকা নিয়ে সকল দলের সাথে প্রকাশ্যে আলোচনা করা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, নাসিক নির্বাচন থেকে বিএনপিকে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। সেখানে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী যোগ্যতার কারণেই বিজয়ী হয়েছে। এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে ব্যর্থ হলে বিএনপিকে আরো খোশারত দিতে হতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপি কর্মসূচী নির্ধারন করে ঠিকই কিন্তু প্রয়োগের পক্রিয়া বার বার ভুল করে। এই আইভীর সৃষ্টিতেও বিএনপিক কিছুটা অবদান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন হলেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে জনগনকে সাথে নিয়ে গণআন্দোলনের সূচনা করতে হবে। আর এই গণআন্দোলনের জন্য ১৯৫৪-র মত যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে হবে। গণতন্ত্রহীনতা আর অবাধ দুর্নীতির রোধে সমাধানের পথ খুজে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, বিচারবিভাগ আমাদের শেষ ভরসাস্থল। এই বিভাগ কার্যকর করতে হবে। সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ও পেশী শক্তি বর্জিত
নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীকে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। আমাদের দেশের সেনাবাহিনী অন্যদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারলে আমার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কেন কাজ করতে পারবে না ?
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, দেশে এখন নাগরিক স্বাধীনতা নেই। নিরঙ্কুশ ক্ষমতার দাপটে দেশের সর্বত্র ভয়-হতাশা আর নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ শত্রুমুক্ত হলেও এখনো চক্রান্ত বিদ্যমান। তিনি বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক অধিকার গ্রাস করে আমাদের একটি পদানত জাতিতে পরিণত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। এই অপশক্তির এদেশীয় দোসররা নানাবিধ চক্রান্তজাল রচনা করে আমাদের বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বিপন্ন করে চলেছে।
গোলাম মোস্তফা ভুইয়া আরো বলেছেন, কোন দলীয় সরকারের অধিনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে আমরা যতই শক্তিশালী করার কথা বলি না কেন দলীয় সরকারের অধিনে সেটা খুব বেশী আশা করা যায় না। তাই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জনমতকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছিল। সেই রকম নির্বাচন যাতে দেশে না হয় তার জন্য জাতীয় ঐক্য জরুরী।
তিনি আরো বলেন, সরকারের গ্যাস ও বিদু্যতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেন,দেশে সব কিছুর মূল্য বাড়ছে, শুধু মূল্য কমছে মানুষের। মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। সরকার নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার বদলে মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। জিনিসপত্রের দাম যখন বৃদ্ধি পায়, তখন সরকার বাজারের কথা বলে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। আমরা রাজনৈতিক
দলগুলো জনগনের এই সমস্যা নিয়েও কথা বলি না। যা অত্যান্ত দু:খজনক ও লজ্জাজনক। শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইয়ে ব্যস্ত বলেই হয়তো আমাদের উপর জনগনের আস্থা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে জাহিদ ইকবাল বলেছেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে সকল দলের অংশগ্রহনে। শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের
ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।