
গাইবান্ধা-১ সুন্দরগন্জ আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকান্ডের খবর শোনার পর থেকে শোকে আমি শোকাহত। ফাকে ফাকে টিভির পর্দায় আর অনলাইন পত্রিকার পাতায় নিয়মিত চোখ রাখছি, দেখলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২ জানূয়ারী ১৭ইং অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকের নির্ধারিত আলোচনার বাইরে তিনি এমপি লিটন হত্যাকান্ড প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন এবং তিনি বললেন, লিটন সব সময় জামাত শিবিরের লক্ষ্য বস্তুতে ছিল এবং সে এলাকায় খুবই জনপ্রিয় ও সাহসী হওয়ার কারনে নিজ নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করে চলেছেন। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কতটুকু বিশ্বাস করতেন এমপি লিটনকে এই কথাটাই তার প্রমান মিলে -তিনি বলেন ঐ শিশু সৌরভ ছেলেটি দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছিল সে সময় তাকে রক্ষা করতেই লিটন গুলি চালায় তবে গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সৌরভের শরীরে বিদ্ব হয়।( দৈনিক ইত্তেফাক ২ জানুয়ারী ১৭ইং অনলাইন ডেস্ক ) এবং আমি আশ্চর্য হই এই কথা ভেবে যে প্রধানমন্ত্রী নিজে সব সত্য ঘটনা জানার পরে, এমনকি বিশ্বাস করার পরেও তিনি যে কতটুকু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তা আমার আর বুঝতে কষ্ট হলনা। এবং আমার এই বিষয়ে যতটুকু জানা আছে এমপি লিটনের বিচার কাজে সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করা হয়নি। এছাড়াও এমপি লিটন হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী -ওবায়দুল কাদের বলেছেন -মৌলবাদী শক্তিদের চরম মূল্য দিতে হবে, (দৈনিক ইত্তেফাক ১জানুয়ারী ১৭ইং অনলাইন ডেস্ক) অপর আর এক বক্তব্য বলেছেন-খুন করে পার পাওয়া যাবেনা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।( দৈনিক ইত্তেফাক ৩ জানুয়ারী-১৭ ইং অনলাইন ডেস্ক)।
মন্জুরুল ইসলাম লিটন এমপি হত্যাকান্ডের বিচার প্রসঙ্গে এমন সাহসী প্রতিবাদ প্রতিশোধ মুখর বক্তব্যে দলের সবার মত কেন জানি আমি আশ্বস্ত হতে পারলামনা। আমাকে বিষয়টি আরো বেশি করে ভাবিয়ে তোলে এবং বারংবার শুধু আমার মনে একই প্রশ্ন ঘুরপাক করছে আসলেই কি বাস্তবে এমপি লিটন হত্যাকান্ডের বিচার হবে? আসলেই কি মৌলবাদীদের বিচার হবে? তবে এই প্রশ্নের উত্তরে মৌলবাদ জঙ্গিবাদ গুপ্ত হত্যা সাম্প্রদায়িক হামলা বা হত্যাকান্ডের ইতিহাসে যদি আমরা পিছনে ফিরে দেখি তাহলে দেখা যায় যে এই জাতীয় প্রায় সব হত্যা মামলার বিচার কাজ থেমে থেমে ধীর গতিতে চলছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যাখ্যা চাইলে তার প্রতি উত্তরে প্রশাসনের নানান অজুহাত ও পরিশেষে প্রশাসনের আশার বাণী শুনেই বসে থাকতে হয় ভুক্তভোগীদের। আর তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে মামলার বিচারিক কাজে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অবহেলার সাজা হিসেবে বদলী করা হয় এবং নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।এর বেশি কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বিধায় আমার এই লেখনীর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি মহোদয়ের কাছে আমার প্রশ্ন থেকেই যায় -প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দগন কি বিচারের উর্ধ্বে? এই প্রশ্নের সাথে আরো ও প্রশ্নবিদ্ব আমি, যখন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডঃ ফজলে রাব্বি মিয়া এমপি, (গাইবান্ধা-১) সুন্দরগন্জ আসনের এমপি লিটনের জানাযা পূর্বে সংক্ষিপ্ত এক বক্তব্যে বলেন : ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারীতে বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাড়িতে হামলা চালিয়ে ৪ জন পুলিশসহ মোট ৬ জনকে হত্যা করে জামাত শিবিরের ক্যাডাররা। আর সেই মামলার আসামীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে পারলে আজ এমপি লিটনের হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটতো না। এবং তিনি আরো বলেন প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তার অবহেলার কারনে বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাড়িতে হামলাকারী ও হত্যাকারীদের বিচার করা সম্ভব হয়নি। (দৈনিক ইত্তেফাক ২ জানুয়ারী ১৭ইং)।
এই কথা জানার পরে তখন মনে পড়ে যায় ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত ব্রাম্মণবাড়ীয়া সাহিত্য একাডেমী কর্তৃক আয়োজিত নবান্ন উৎসব-১৪২৩ উদযাপনের প্রধান অতিথি-ব্রাম্ননবাড়ীয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্হায়ী কমিটির সভাপতি -উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী মহোদয় প্রদত্ত বক্তব্যের কথা গুলো, তিনি বলেছিলেন: ব্রাম্মনবাড়ীয়া জেলা শহরে ঘটে যাওয়া গত ১২ জানুয়ারী ২০১৬ ইং তারিখের মৌলবাদের তান্ডব লীলায় যারা জড়িত ছিল, প্রশাসন ঐ সমস্ত দোষী জড়িতদের গ্রেফতার করে যদি বিচারের আওতায় আনতো, তাহলে আজকের এই নাসিরনগরের সাম্প্রদায়িক হামলা করার মত সাহস তারা পেতনা। তিনি প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে বলেন নাসিরনগরে মাইক দিয়ে সভা সমাবেশ করা হলো প্রশাসনের চোখের সামনে এবং সভা সমাবেশ শেষে তারা হিন্দুদের বাড়ী ঘর মন্দিরে হামলা করল তাতে স্থানীয় প্রশাসনের কি কোন কিছু করণীয় ছিল না ? এছাড়া তিনি বলেন নাসিরনগরের এমপি সাহেবের সাথে সাংগঠনিক বিষয়ে মতবিরোধ ছিল জেলা আওয়ামীলীগের। এইটা কোন ব্যক্তি বা দলীয় কোন্দলের বিষয় নয়। আর কিছু মানুষ সেই সুযোগে পত্র পত্রিকা সহ নানান অভিনব কৌশলে আমাকে সাম্প্রদায়িক বানানোর চেষ্টায় তৎপর হয়ে উঠল। ইত্যাদি।
এবার আমি লেখকের বক্তব্যটা আমার মত করে যদি বলি তাহলে -উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি একজন মূল ধারার কঠ্রোরপন্হী আওয়ামীলীগার। মহান মুক্তিযুদ্বের অন্যতম সংগঠক ও যুদ্বাহত বীর মুক্তিযোদ্বা ও মানব ধর্মের ইসলামে বিশ্বাসী একজন মানূষ ও সেই হিসেবে তিনি কখনো কোন মানবের ক্ষতি করতে পারেনা বা কোন সংখ্যালঘুর বাড়ী ঘর বা মন্দিরে হামলা চালানোর মত অমানবিক কাজ করতে পারেনা। তিনি জন্ম জন্মান্তর থেকেই একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ । পাঠককুলে যেই কথাটি তুলে ধরতে আমি ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর এর সাম্প্রদায়িক হামলার কথা তুলে ধরলাম কারন এই হামলাকে কেন্দ্র করে ইলেকট্রনিকস মিডিয়াসহ দেশি বিদেশী প্রায় সব মিডিয়াতে নাসিরনগরের সংখ্যালঘূদের বাড়ী ঘর মন্দির হামলার সাথে জেলা আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের খবরটাকে বেশি বেশি করে প্রচার করেছে এবং সমালোচনার ঝড় তুলেছেন । যাতে করে ভারতসহ অনান্য দেশের সাথে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকারের সুসম্পর্ক বিনষ্ট হয়ে যায়। ঠিক আমরা যদি এমপি লিটনের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিত্তিতে বলি এমপি লিটন শিশু সৌরভকে দুর্বৃত্তদের আক্রান্ত থেকে বাঁচাতে গিয়ে গুলি করেছিলেন তবে গুলি লক্ষ্যভেদ হয়ে শিশু সৌরভের গায়ে বিদ্ব হয়। কিন্ত দৈনিক পত্রিকাসহ মিডিয়াতে মিথ্যা খবর খুব বেশি করে প্রচারিত হল এমপি লিটনের বিরুদ্ধে । যাতে করে এমপি লিটন জনপ্রিয়তা হারায়। এবং এই শিশু সৌরভকে গুলি করার অপরাধের মামলায় যদি এমপি লিটনের লাইসেন্সকৃত অস্র জমা নেওয়া যায় তাহলে তাকে হত্যা করতে জামাত শিবিরের জন্য সূবিধা হবে। দৈনিক ইত্তেফাক ৪ জানুয়ারী ২০১৭ ইং তারিখের পত্রিকায় পাতায় আমার চোখে পড়ল ঠিক এই রকম একটি বক্তব্যে এমপি লিটনের স্ত্রী স্নৃতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন জেলা আওয়ামীলীগ বা সুন্দরগন্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের কারো সাথে তার কোন দলীয় কোন্দল ছিলনা। একমাত্র জামাত শিবিরই তার শত্রু পক্ষ ছিল এছাড়া তিনি আরো বলেন ২০১৫ সালের ২ অক্টোবরের শিশু সৌরভের উপর মিথ্যে গুলি ছোড়ার ঘটনা কেন্দ্র করে তাকে মিথ্যে মামলায় জড়ানো হল এমনকি এমপি লিটনের ব্যবহৃত লাইসেন্সকৃত একটি সর্টগান ও রিভালবার প্রশাসন জব্দ করে রাখেন এই শিশু সৌরভের মামলার অজুহাতে। এবং উৎপেতে থাকা খুনি চক্র নিশ্চিত হল যে তাদেরকে প্রতিহত করার মত কোন অস্ত্র নাই এমপি লিটনের বাড়ীতে।এবং তাদের সূবিধামত সময়ে তারা এই হত্যা মিশন সম্পন্ন করেন। ঠিক নাসিরনগরের মত যৌক্তিক অনেক কারন থাকা সত্বেও প্রশাসনের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে তেমন কারো মাথা ব্যাথা নেই। শুধু যত দোষ আওয়ামীলীগ নেতাদের। কারন আওয়ামীলীগ নেতাদের তো আওয়ামীলীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা’র প্রশ্নের জবাবের উত্তর দিতে হবে। আর তাই প্রশাসনের ক্যাডাররা সহজেই এই diplomacy টাকে ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল করে থাকেন। মোদ্দাকথা হল, গনতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে দায়িত্বে অবহেলা বা গাফিলতি বা দেশের সাথে বেঈমানি করলে তাদেরকে যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে জবাবদিহিতার কঠোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আর নতুবা প্রশাসনের ভিতরে জামাত বিএনপির আমলের নিয়োগপ্রাপ্ত যত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আছে তাদেরকে চিহ্নিত করন করা হোক এবং তাদের ব্যাপারে কি করণীয়, জাতীয় সংসদে আলোচনা করে সঠিক সমাধান করা হোক। কারন আমরা শেখ হাসিনাকে হারিয়ে ঘরে ঘরে আগুন জ্বালাইতে চাইনা। ঐটাতে কোন লাভ হবেনা মাননীয় আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব। কারন আমরা এখন আগুন জ্বালাইয়া যদি সব পুড়ে ছাই ও করে ফেলি তাতে বঙ্গবন্ধু আর আমাদের মাঝে ফিরে আসবেননা। তাই আপনি সাধারন সম্পাদক হিসাবে দল ও দেশের অনেক প্রত্যাশা । তাই আপনি অন্য কোন পদ্ধতি আবিষ্কার করুন। কারন, প্রশাসনে ঘামটি মেরে থাকা জামাত শিবিরের নেতারা সরকারি ভাবে বেতন ভাতা যেমন নিচ্ছেন ঠিক তাদের দল জামাতিদের তহবিল থেকে বেতন ভাতাসহ নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই তারা সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেনা। তাই আমি বলব অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি বিপদসীমা অতিক্রম করছে এই মুহুর্তে বাংলাদেশ । তাই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে বিচারের উর্ধ্বে থাকার যেই সংস্কৃতি চলমান আছে আমাদের দেশে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। আর না হয় আগামী দিনের ডিডিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেকটা উদ্বেগজনক হয়ে দাড়াবে। জয় বাংলা, জয় ববঙ্গবন্ধু, জয় হোক মুজিবাদর্শের।
লেখকঃ আব্দুল কাইয়ুম, সৌদি আরব প্রবাসী রাজনৈতিক