নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, দক্ষিণ কোরিয়া: এসো হে বৈশাখ এসো এসো! এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পহেলা বৈশাখ। আজ তার ব্যতিক্রম হয়নি বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ। বাঙালিদের সার্বজনীন উৎসবকে ছড়িয়ে দিতে বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাংলাদেশি ও প্রবাসী বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় এবং ভুলে যেতে চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি।
সেই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের কেন্দ্রবিন্দুতে আয়োজন করা হয় নববর্ষ উৎসব। বৈরি আবহাওয়া কনকনে শীত আর ঝিরিঝিরি বালি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফ্লাইওভারের উপরে মনোরম পরিবেশে উদযাপন হয় আজকের এই বাংলাবর্ষবরণ উৎসবটি। যদিও কিছুদিন বাকি রয়েছে পহেলা বৈশাখ, সে তর আর সইতে চায়না প্রবাসীরা। আমাদের বাধ ভাঙা আনন্দের মাঝে তাই প্রবাসীদের সুবিধার্থে আজ রবিবার বন্ধের দিন এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়ে।
উৎসবে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ছিলো লক্ষণীয়। সিউল সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহযোগীতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন বাংলাদেশ কালচারাল এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া। আয়োজক কমিটির সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে এ দেশের নাগরিকদের মাঝে পরিচিত করাই ছিলো আমাদের মূল লক্ষ। আমরা সকল প্রবাসী বাংলাদেশী, স্বদেশী দূতাবাস ও কোরিয়ান সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে এই আয়োজনকে প্রতিবছরই নিয়মিত করার চেস্টা করবো।
পহেলা বৈশাখের এ উৎসবকে ফসলি সন বাংলাবর্ষ বা নববর্ষ আমরা যাই বলিনা কেন পহেলা বৈশাখ হিসেবেই পরিচিত লাভ করেছে বাঙ্গালীদের এই সার্বজনীন উৎসবটি। মূলত সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
বাংলা দিনপঞ্জীর সঙ্গে হিজরী ও খ্রিস্টীয় সনের একটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। হিজরী সন চাঁদের হিসাবে শুরু হয়ে খ্রিস্টীয় সন চলে ঘড়ির হিসাবে। এ ভেদাভেদে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে আর ইংরেজি দিন শুরু হয় রাতের মাঝামাঝিতে। বাংলা সনের দিন শুরু হয় ভোরে, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে। সেই হিসেবে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বাঙালির পহেলা বৈশাখের উৎসব।
নতুন বছরের উৎসবের সাথে মিল রেখে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন রঙবেরঙয়ের জামাকাপড় পড়ে এবং আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং সেই সাথে বিশেষ খাবার পান্তা ভাতের সাথে ইলিশের ব্যবস্থাও থাকে। দঃ কোরিয়ায় ও সেই চিরায়ত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে উপস্থিত সকল প্রবাসীদের পান্তা ইলিশ আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে।
শুরুতেই পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্যবাহি মঙ্গলশোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি মঞ্চ থেকে বের হয়ে ফ্লাইওভারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মঞ্চে এসে শেষ হয়। মঙ্গলশোভাযাত্রাটি উদ্বোধন করেন দঃ কোরিয়াস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।
দ্বিতীয় পর্বে মনীষা ও তামিমের চমৎকার উপস্থাপনায় নাচ-গান, কবিতা আবৃতি ও বাহারি রকমের খাবারের মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতির এ ধারাকে আনন্দময় করে তোলে এবং প্রবাসীদের ব্যস্ততম যান্ত্রিক জীবনকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও এক টুকরো বাংলাদেশ অনুভব করিয়ে তুলেছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কালচারাল এসোসিয়েশন ইন কোরিয়ার নেতৃবৃন্দ ছাড়াও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।