লক্ষন বর্মন,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: নরসিংদীর শিবপুরে আটাশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি নাজিউর রহমান ও প্রধান শিক্ষক বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা অবৈধ ভাবে অফিস সহকারী নিয়োগ দিয়ে প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। অতি সত্বর অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবীতে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব ও নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ও নিয়োগ কমিটির সদস্য মোঃ আবু বক্কর ছিদ্দিক ও আব্দুর রশিদ বলেন, অভিযোগ করার পরও অজ্ঞাত কারনে নিয়োগটি বহাল তবিয়তে রয়েছে।
জানা যায়, আটাশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্য,পদে প্রধান শিক্ষক ও নিম্ন সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ করা হবে মর্মে ২৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল’২০১৬ ইং তারিখ সকাল ১০টায় প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সহ বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে মর্মে আহবান করা হয়। এতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ নাজিউর রহমানের পছন্দের প্রধান শিক্ষক প্রার্থী মোঃ মুজাহিদ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে উপস্থিত হতে বিলম্ব হওয়ায়, অজ্ঞাত কারনে পরীক্ষা স্থগিত করে ১৭ এপ্রিল তারিখ পরীক্ষার দিন ধার্য করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ওই প্রধান শিক্ষক প্রার্থীর কাছ থেকে ৮লাখ টাকা, ও অফিস সহকারীর কাছ থেকে ২লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহন করে সভাপতি প্রভাব খাটিয়ে মোঃ মুজাহিদকে প্রধান শিক্ষক ও শাওন কে অফিস সহকারী হিসেবে নির্বাচিত করে নিয়োগ দেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছকু নিয়োগ কমিটির অপর এক সদস্য জানান, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্য গনের জোর পূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে ৭ এপ্রিল রেজুলেশন পূর্বক ৫সদস্য বিশিষ্ট একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করাহয়। এতে নিয়োগ কমিটির সভাপতি হিসেবে নাজিউর রহমান, সদস্য নরসিংদী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম মিত্র, সদস্য শিবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার,মাহমুদা আক্তার, সদস্য আটশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুপচান মিয়া, ও অভিবাভক সদস্য আবুবক্কর সিদ্দিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়োগ কমিটির আরেক সদস্য জানায়, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার পূর্বেই নিয়োগ কমিটির সদস্য গৌতম মিত্র ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহমুদা আক্তারকে দুই লাখ টাকা প্রদানকরা হয়। তারা পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র নিয়োগ কৃত প্রধান শিক্ষক মুজাহিদ ও অফিস সহকারী শাওনকে দিয়ে দেন। তাদের দুইজনই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে মর্মে ফলাফল প্রকাশ করেন।
নিয়োগ দুর্নিতির সংবাদটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সহ সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে জানাজানি হলে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। জরুরী ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিলের দাবীতে তারা সংশ্লিষ্ট দফতর সহ জেলা প্রশাসন ও শিবপুর উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন ।
শিবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহমুদা আক্তারের বিরুদ্ধে দূর্নীতি আর নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ থাকলেও তিনিই আবার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োজিত হন। এতে স্কুল ও এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বিদ্যালয়ের সভাপতি কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে মাহমুদা আক্তার মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে তদন্তের নামে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবেদনটি শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পাঠিয়ে দেন।
এলাকা বাসী ও বিশিষ্টজনরা জানায়, বিদ্যালয় বা যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটিতে সংশ্লিস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রাখা অত্যাবশ্যকীয় আর তা না হলে অনিয়ম ও দুনীর্তি। সকল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিবাদ করছে। এতে সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এ নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছ নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবী জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ।
শিবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহমুদা আক্তার বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে কোন্দল থাকতে পারে। প্রথমবারে পরীক্ষা পিছানো হয়েছে ম্যানেজিং কমিটির গাফিলতির কারনে। এতে আমাদের কোন দুর্বলতা ছিলনা। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়।