নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবছর পবিত্র আশুরার মিছিলে ছুরি কিংবা যেকোনো ধরনের অস্ত্র নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আর তাই ছুরির বিকল্প হিসেবে বুকের উপর ব্লেড চালিয়ে শোকের মাতম করছে শিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসাইনী দালান ইমামবাড়া থেকে বিশাল বড় তাজিয়া মিছিল বের করা হয়।
এ বছর ছুরি না থাকলেও অনেকেই কারবালার সেই মর্মান্তিক দৃশ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে ব্লেডের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করছে বুক। বুক চাপড়ে হায় হোসেন হায় হোসেন করে মাতাম করতে দেখা গেছে তাদের।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছিলেন, ‘এ বছর তাজিয়া মিছিলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে (ছুরি, কাঁচি) নিয়ে বের হওয়া যাবে না। শারদীয়া দুর্গা পূজার বিসর্জন ও তাজিয়া মিছিল একই দিনে পড়া দুই সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ হিজরির সাল অনুসারে ১০ মহররম কারবালায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মৃত্যুর দিনটি সারাবিশ্বে মুসলমানরা পালন করেন।
ব্লেড দিয়েই ক্ষত বিক্ষত বুকতাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরামহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (রাঃ) হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম কারবালার ফোরাত নদীর তীরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন। এই শোক ও স্মৃতিকে স্মরণ করে সারাবিশ্বে মুসলিমরা আশুরাকে ত্যাগ ও শোকের দিন হিসেবে পালন করেন। তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে আশুরা। দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী আমাদেরকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা যোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার। পবিত্র আশুরার মহান শিক্ষা আমাদের সকলের জীবনে প্রতিফলিত হোক, এ প্রত্যাশা করি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। এখানে হানাহানি, হিংসা, দ্বেষ বা বিভেদের কোনো স্থান নেই। পবিত্র আশুরার এই দিনে আমি সাম্য, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেলও এই দিনের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত শিক্ষা সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়।