ক্রীড়া প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: দশ মাস বিরতির পর ওয়ানডে খেলতে নেমে আফগানদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূখে পড়তে হয়েছে টাইগারদের। অবশেষে দোদুল্যমান ম্যাচে স্বস্তি নিয়ে নিয়ে আসে শেষ ৫ ওভারের বোলিংয়ে। প্রচুর ঘাম ঝরিয়েও পরাজিত হয়েই মাঠ ছাড়তে হয় আফগানদের। সবমিলিয়ে ওয়ানডেতে মাশরাফিদের প্রত্যাবর্তন-পর্বে মুখ রক্ষা হলো গতকাল রোববার শের-ই-বাংলায়। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৭ রানের জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। একই মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজের পরবর্তী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামী বুধবার।
ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের মহড়ার মাঝেও দুর্দান্ত বোলিং করেন বাংলাদেশের বোলাররা। সপ্তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৪৬ রানের সময় মারকুটে শাহজাদকে (৩১) আউট করে শুরু করেন অধিনায়ক মাশরাফি। পরের ওভারেই সাকিবের স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে এলবিডব্লিউ আরেক ওপেনার নুরি (৯)। এই উইকেটের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে আব্দুর রাজ্জাকের ২০৭ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন সাকিব। এরপর ২টি উইকেট নিয়ে দেশের হয়ে ওয়ানডে, টেস্ট, টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির বিরল রেকর্ড গড়েন বিশ্বেসেরা এ অলরাউন্ডার।
উদ্বোধনী জুটির পতনের পর ১৪৪ রানের জুটি গড়েন রহমত শাহ (৭১) ও হাসমাতউল্লাহ শহিদী (৭২)। এরপর মোহাম্মদ নবী (৩০) ও স্তানিকজাই (১০) চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ম্যাচের শেষ ৫ ওভারের বোলিং। মাশরাফির ওই ওভারেই আফগানদের দ্রুত উইকেট পতনের সূচনা। এরপর তাসকিন ও রুবেলের বোলিংয়ে দিশেহারা আফগানিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রান সংগ্রহ করে। তাসকিন আহমেদ ৪টি, সাকিব ও মাশরাফি ২টি করে উইকেট লাভ করেন। এছাড়া রুবেল ও তাইজুল একটি করে উইকেট নেন।
তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহর অর্ধশতকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। মঞ্চ প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। তবে শেষের দিকে সাকিব আল হাসান ছাড়া আর কেউ জ্বলে উঠতে না পারায় সংগ্রহটা বেশি বড় হয়নি স্বাগতিকদের। গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শেষ বলে ২৬৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
গত বছরের নভেম্বরের পর ওয়ানডে খেলতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। পঞ্চম বলেই ফিরে যান সৌম্য সরকার (০)। দৌলত জাদরানের বল পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তিন নম্ব^রে নামা ইমরুল কায়েসের শুরুতে কয়েকবার বেঁচে গেছেন অল্পের জন্য। ১৩, ১৭, ২১ রানে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে পারতেন তিনি। তবে ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পাওয়া এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সঙ্গেই প্রতিরোধ গড়েন তামিম। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ নবি। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা এই অফ স্পিনারের বল ইমরুলের (৩৭) ব্যাটের কানায় লেগে প্যাড হয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৭৯ রানের আরেকটি কার্যকর জুটি উপহার দেন তামিম। রশিদ খানের বলে কাট করে চার হাঁকিয়ে ৬৩ বলে পৌঁছান অর্ধশতকে। মিরওয়াস আশরাফের বল সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে লংঅফে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার দারুণ ইনিংসটি।
৯৮ বলে ৯টি চারে ৮০ রান করার পথে দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন তামিম। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিবের সঙ্গে মাহমুদুউল্লাহর ৪০ রানের জুটিতে দুইশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। দৌলতের বলে লংঅন ও মিডউইকেটের মাঝ দিয়ে দারুণ এক চারে ৬৫ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় নবির বলে সীমানায় মিরওয়াইস আশরাফকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। ৭৪ বলে খেলা তার ৬২ রানের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও দুটি ছক্কায়। ৪১তম ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ২০৩ রান। তখনো মাঠে নামেননি মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মাশরাফি বিন মুর্তজারা। সেখান থেকে ২৮০/২৯০ রান অসম্ভব ছিল না।
রশিদ খানের স্পিনে পরপর দুই ওভারে মুশফিক ও সাব্বির ফিরে গেলে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। বোল্ড হয়ে ফিরেন মুশফিক (৬), বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এলবিডব্লিউ হন সাব্বির (২)। দুই ব্যাটিং ভরসার কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। বাংলাদেশকে আড়াইশর পথে রাখেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। কয়েকটি সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করা আফগানরা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ফেরায় দুর্দান্ত এক ক্যাচে। ৪০ বলে তিনটি চারে ৪৮ রান করেন সাকিব। ৭ উইকেট হাতে থাকা বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে ৬৯ রানের বেশি রান করতে পারেনি। অভিষেকে একটি উইকেট পেয়েছেন আফগানিস্তানের নাভিন-উল-হক। ১৭ বছর বয়সী পেসার ফিরিয়েছেন মাশরাফিকে। ৭৩ রানে ৪ উইকেট নেন নেন পেসার দৌলত। ২টি করে উইকেট নেন রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবি।