নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম : রাজধানীর গুলশান-১ নাম্বারের ডিএনসিসি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। এতে প্রায় দেড়শ’কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঘটনাস্থল দ্বিতীয়বারের মতো পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে জানান তিনি। এর আগে সকাল সাড়ে আটটায় তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে,ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এ আগুন নাশকতার। তাদের উচ্ছেদের জন্যই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মার্কেটে আগুন লাগানো হয়েছে। আগুন নিভাতে ফায়ার সার্ভিস বিলম্ব করেছে বলেও অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
মার্কেটের একজন দোকান মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিস নানা অজুহাতে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে না। তারা রাস্তায় যানজট ও পানির স্বল্পতার কথা বলছে। মার্কেটের আশেপাশে ৩ টি লেক রয়েছে। তারা তো লেক থেকেই পানি আনতে পারতো। মার্কেটে প্রবেশের ১৬টি গেট রয়েছে। চারপাশ দিয়েই মার্কেটে পানি দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তারা তা করছে না।
ডিসিসি পাকা মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এম তালাল রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, এটি পরিকল্পিত আগুন। আমাদের পাকা মার্কেটে ২৩৪টি দোকান আছে। এর সবগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা যখন প্রথম এসেছি তখন পাকা মার্কেটে আগুন ছিল না। শুধু কাঁচাবাজারে আগুন ছিল। ফায়ার সার্ভিস দুটি গাড়ি দিয়ে পানি দিচ্ছিল। তখন তারা যদি আমাদের আগুন নিভিয়ে ফেলতে বলতো তাহলে আমারই নিভিয়ে ফেলতে পারতাম।
সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. আখতারুজ্জান বলেন, ফায়ার সার্ভিস কিছুই করেনি। আমার দোকানে প্রায় ৪-৫ কোটি টাকার কাপড় ছিল। দোকানের সর্বোচ্চ স্যুটের দাম দেড় লাখ টাকা। সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা। আমাদের কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, ২৩টি ইউনিটের চেষ্টায় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে তা পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান, মার্কেটটিতে অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। মার্কেটের দোকানগুলোতে থাকা অতি দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। ওই সময় পানিস্বল্পতার কারণে মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হচ্ছে বলে জানান তিনি। আইজিপি বলেন, মার্কেটে কাপড়ের দোকান, জুতাসহ দাহ্য বিভিন্ন পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে আগুন লাগার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিট।
মঙ্গলবার ( জানুয়ারি) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনায়েত হোসেন জানিয়েছে, ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মাসুদুর রহমানকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- তেজগাঁও স্টেশনের সালাহ উদ্দিন, তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম ও তানহারুল ইসলাম। বুধবার থেকে তারা তদন্ত কাজ শুরু করবেন বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, সোমবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে গুলশান ডিসিসি মার্কেটে আগুন লাগে। আগুনে মার্কেটের দুইটি অংশ ধসে পড়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিটের পাশাপাশি নৌবাহিনীর একটি ইউনিট যোগ দেয়।