নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: রাজধানীর গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটের আগুনে দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন দোকান মালিকরা। দোকান পোড়া মানুষগুলোকে গ্রাস করেছে সংকট আর অনিশ্চয়তায়। মানুষগুলো তাদের উপার্জনের শেষ সম্বলটা কেড়ে নিয়েছে।
গত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় আগুনে দোকান পোড়া মানুষগুলো অসহায় বসে আছেন। কেউবা পুড়ে যাওয়া দোকানের ছাই হাতে নিয়ে বিলাপ করছেন। আবার কেউবা সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতার অপেক্ষায় রয়েছেন।
এমডি ট্রেডাসের মালিক এমদাদুল বলেন, দাড়োয়ান আমাকে জানায় বিশ মিনিটের মধ্যে পুরো মার্কেট আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে আমার দোকান পুরোটা পুড়ে যায়, দোকান থেকে কিছুই বের করতে পারি নাই। প্রায় ২০ লক্ষ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমার দুই সন্তানসহ চার জনের সংসার এই দোকানের উপর নির্ভর করেই আমার সংসার চলত। আমার যা কিছু ছিলো সবকিছু বিক্রি করে এই দোকানে ইনভেস্ট করেছিলাম। আর এই দোকানটা আগুনে পুড়ে গেলো। এখন আমরা চলবো কিভাবে? আগুনে আমাদেরকে রাস্তায় নামিয়ে দিলো।
জুয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক তাপস বলেন, আগুনে সব কেরে নিলো আমার। দোকানে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল ছিলো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো সব। বাবা-মা, ভাই-বোনসহ মোট ১২ জনের সংসার। রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা এই দোকান থেকেই হতো কিন্তু আগুনে সব পুড়ে যাওয়ায় রুজি-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেলো।
জেনি এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদুল ইসলাম বাবুল বলেন, আগুনে দোকানের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কিছুই বের করতে পারি নাই। তিন ভাই মিলে এই ফার্নিচার দোকান দিয়ে ছিলাম। দোকানে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ছিলো। এই দোকানেই ছিলো আমাদের তিন ভাইয়ের এক মাত্র আয়ের উৎস। তিন ভাইয়ের সংসারে ১৫ জন সদস্য আছে এখন আমরা কি করবো বুঝতে পারছি না। আগুনে সর্বহারা করে দিলো আমাদের। এখন রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নাই।
ডিএনসিসি মার্কেটের চেয়ারম্যান শের মোহাম্মদ বলেন, ডিএসসিসি মার্কেটে আগুনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাদের কাছে অাসছিলেন। তিনি সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ডিএনসিসি মার্কেটের আগুন পরিকল্পিত ভাবেই করা হয়েছে। ডেভেলপার মেট্রো গ্রুপ ও সিটি করপোরেশন মিলে এই নাশকতা করেছে। কারণ তাদের সাথে ২০০৩ সাল থেকে ডিএনসিসি দোকান মালিকদের সঙ্গে মামলা চলছে। তারা চায় এই মার্কেট ভেঙ্গে এপার্টমেন্ট করতে কিন্তু দোকান মালিকরা এপার্টমেন্টের পক্ষে না।
গুলশান ডিএনসিসি (ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশন) মার্কেটের আগুনে কোনো নাশকতা নেই বলে মনে করছেন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা জানান।
তিনি জানান, এখানে কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। নাশকতার কিছু নেই। তবে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যৌথভাবে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার (৪ জানুয়ারি) থেকে অনুসন্ধান চলছে। তদন্ত কমিটির অনুসন্ধান শেষে বলা যাবে ঘটনাটা কি ছিলো।
তদন্ত কমিটি
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) আলী আহাম্মদ জানান, মঙ্গলবার ( জানুয়ারি) পাচঁ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটিতে ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মাসুদুর রহমানকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটি বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। কমিটির তদন্ত রিপোর্ট শেষে বলা যাবে আসল কারণ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- তেজগাঁও স্টেশনের সালাহ উদ্দিন, তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম ও তানহারুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, সোমবার (০২ জানুয়ারি) রাত আড়াইটা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট দীর্ঘ সাড়ে ১৬ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে প্রায় ৬০৫ টি দোকান পুড়ে যায়।