নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের আজকের দিনটিতে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। তাদের বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এ মহান নেতার অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিই- এটাই হোক এবার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সকলের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারবাহিকতা রক্ষা করি। সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, যেখানে ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ থাকবে না। সকলের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার থাকবে উন্মুক্ত।’
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
বাঙালি জাতির মহান মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। নয় মাসের সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে তার দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। জাতির পিতা নিজেই তার এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নে লাখ লাখ নিরীহ মানুষের ওপর গণহত্যা চালায়। পরদিন ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে সর্বস্তরের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
স্বাধীনতা ঘোষণার পর দখলদার পাকিস্তানিরা তার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটকে রাখে। তারপর বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ঠিক তখন পশ্চিম পাকিস্তানে প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে যে সেলে রাখা হয় তারই পাশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়।
তারপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সে যুদ্ধে ত্রিশ লাখ প্রাণ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতি বিজয়ের লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।
তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী প্রবল জনমত গড়ে উঠে। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানালে বিশ্বনেতারাও তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হন। অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে তাকে সসম্মানে মুক্তি দেয়। অবশেষে ১৯৭২ সালের আজকের এই দিনে বিজয়ীর বেশে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তার প্রিয় স্বদেশে ফিরে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালি।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দুপুর আড়াইটায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা। এসময় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন, জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে।