নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার দ্রুত বিচারে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি আরও বলেছেন, অপরাধী যত বড় হোকনা কেন সে দায় মুক্তি পাবেনা। বাংলাদেশের ২১ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার দেয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অপরাধী যত বড় হোক না কেন সে দায়মুক্তি পাবে না। চাঞ্চল্যকর সাতখুনের মামলা প্রভাবশালী আসামী র্যাব’র কতিপয় কর্মকর্তা লোমহর্ষক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, যা সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। সুপ্রিমকোর্টের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের ফলে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হয়। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে উক্ত মামলার বিচার নিষ্পত্তি করায় বিচার বিভাগের প্রতি দেশের আপামর জনগণের আস্থা আরো বেড়েছে।
রাষ্ট্রের অন্য বিভাগ বিচার বিভাগের দায়িত্ব পালনে হস্তক্ষেপ করবেনা-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান বিচারপতি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য নীতির প্রতিফলন হচ্ছে সংবিধানের মূল চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিচার বিভাগ এর সীমার বাইরে গিয়ে অন্য বিভাগের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। তেমনিভাবে আমিও প্রত্যাশা করি রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগ বিচার বিভাগের দায়িত্ব পালনে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, প্রত্যেক বিভাগকে দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে অপরিহার্যভাবে সৃষ্ট শীতল সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করলে-প্রত্যেক বিভাগের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রভূত কল্যাণে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির বিধিমালা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন অধস্তন আদালতের বিচারকদের কাজের প্রকৃতি ও ধরণ অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র। বিচারকদের শৃঙ্খলামূলক বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পক্ষে বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রধান বিচারপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেটে প্রকাশের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সামান্য বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও আশা করছি অচিরেই তা দূরীভূত হবে। তিনি বলেন, বিচারকেরা স্বতন্ত্র আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে বিচার বিভাগ পৃথককরণের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে। বিচারাঙ্গনের বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে ঝুলে থাকা মামলাগুলো অগ্রাধিকার পাওয়া উচিৎ মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে ৩০ লক্ষাধিক মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের তুলনায় কর্মশক্তি খুবই অপ্রতুল। এটা সুস্পষ্ট যে, দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। তা সত্ত্বেও ঝুলে থাকা মামলাগুলো অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। কারণ বিচারপ্রার্থীগণ দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেছেন। এছাড়া আমাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, আদালতে সার্বিক কার্যক্রমও যেন একইরকম দীর্ঘসূত্রিতার কবলে পড়ে না যায়।
বানীতে বিচার বিভাগ ও সাংবাদিকদের সুসম্পর্ক অত্যাবশ্যক বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। একই সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে গণমাধ্যমের ভ’মিকাকে সাধুবাদ জানান তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, মিডিয়া রাষ্ট্রের চতুর্থ অঙ্গ হিসেবে অবদান রেখে আসছে। সমাজের অসঙ্গতি দূরীকরণে সংবাদপত্র এবং সমাজ বিনির্মাণে সাংবাদিক তথা গণমাধ্যমের ভূমিকা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। ফলে বিচার বিভাগ ও সাংবাদিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক অত্যাবশক।