হাকিকুল ইসলাম খোকন,নিউইয়র্ক, বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার গত ৮ বছর যাবৎ অটিজম ও অন্যান্য নিউরো ডেভোলাপমেন্ট ডিজঅর্ডার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে যা বাংলাদেশকে অটিজম সচেতনতার ক্ষেত্রে বিশ্বের বুকে রোল মডেলে পরিণত করেছে”- ৩১ মার্চ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টে একথা বলেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। “Populations in Movement: Addressing the Opportunities and Challenges to Ensure Care and Services to Migrants with Autism and Developmental Disabilities” শিরোনামের এই সাইড ইভেন্টটি বাংলাদেশ মিশনের সাথে যৌথভাবে আয়োজন করে কাতার মিশন ও অটিজম স্পিকস্ গ্লোবালি, আর এতে স্পন্সর করে চীন, ইন্ডিয়া ও তুরস্কের স্থায়ী মিশন।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশ এ অঞ্চলের গুটিকয়েক দেশের মধ্যে অন্যতম, যে দেশ শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংক্রান্ত কনভেনশনই নয়, এ সংক্রান্ত অপশনাল প্রটোকলও অনুস্বাক্ষর করেছে। তাছাড়া জাতীয় ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০২১) বাংলাদেশ সরকার অটিজম, নিউরো ডেভোলপমেন্ট ডিজঅর্ডার ও প্রতিবন্ধী বিষয়ক ইস্যুগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে”।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য, বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা হোসেনের অটিজম সংক্রান্ত অবদানের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, “বিভিন্ন ধরনের সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে নিরলসভাবে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত রাখার জন্য তিনি আজ পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যাক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। ‘ঢাকা ডিক্লারেশন’ এবং ‘সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টা অটিজম বিষয়টিকে শুধু আমাদের অঞ্চলেই নয়, বিশ্বের সামনে পুরোভাগে এনে দিয়েছে”।
স্থায়ী প্রতিনিধি আরও বলেন, “অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস ও অন্যান্য ডেভোলাপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও আর্থ-সামাজিক প্রয়োজনীয়তার উপর ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদ গৃহীত প্রথম রেজুলেশন ৬৭/৮২ গ্রহণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিয়েছিল”। বাংলাদেশ, ভুটান ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে নিয়ে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এবছর ১৯-২১ এপ্রিল অটিজম ও নিউরোডেভোলাপমেন্ট ডিজঅর্ডার বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশনের আয়োজন করছে মর্মে স্থায়ী প্রতিনিধি জানান।
রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, “আমি আশা করি, অটিজম ও ডেভোলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি আক্রান্ত অভিবাসীগণ যে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা নিরসনে সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আজকের এই ইভেন্ট আমাদের অনন্য সুযোগ এনে দিবে। আমার বিশ্বাস, অটিজম ও ডেভোলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি আক্রান্ত অভিবাসীগণ বিশেষভাবে বৈশ্বিক মনোযোগ পাওয়ার অধিকারী এবং টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০, যেখানে ‘কেউ পিছনে থাকবে না’ মর্মে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে সেখানেও তারা সমান সুযোগ পাবে”।
ইভেন্টির মডারেটর ছিলেন সিবিএস নিউজ এর জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি পামেলা ফক্। জাতিসংঘের কমিউনিকেশন এন্ড পাবলিক ইনফরমেশন বিভাগের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাহের নাসের জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য পড়ে শোনান। এছাড়া কাতার, ইন্ডিয়া, বুলগেরিয়া, চীন ও তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং অটিজম স্পিকস্ গ্লোবালি’র প্রেসিডেন্ট উদ্বোধনী অংশে বক্তব্য রাখেন। প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ওয়েরনার ওবারমেয়ের (Werner Obermeyer), আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার প্রতিনিধি মিজ্ সুজানে শেলডন (Suzanne Sheldon),এ গ্লোবাল ভয়েস ফর অটিজম এর প্রতিনিধি মেলিসা ডায়মন্ড (Melissa Diamond,টাফ্টস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেস ডোনাল্ট ইরট্লিয়েব (Donald Wertlieb) এবং অটিজম ইউরোপ এর প্রতিনিধি সুসসানা সিলভ্যাসি(Zsuzsanna Szilvasy)।
এর আগে আজ সকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্টের চলতি দায়িত্ব থাকা রাষ্ট্রদূত মোমেন জাতিসংঘের পাবলিক ইনফরমেশন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াবলী বিভাগের আয়োজনে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আরেকটি সাইড ইভেন্ট U ‘Toward Autonomy and Self-Determination’-এ সভাপতিত্ব করেন। বািংলাদেশ এই ইভেন্টটিও কো-স্পন্সর করে।