ক্রীড়া ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: ঘরের মাঠ, পরিচিত দর্শক, গত দুই বিশ্বকাপেই জয়ের স্মৃতি- তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো কিছুই কাজে আসেনি বাংলাদেশের। শুক্রবার জয় যখন হাতের মুঠোয় ছিল ঠিক তখনই দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচটি হেরে যায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। এমন হারের ফলে অনেকটা ক্ষুধার্ত বাঘে পরিণত হয়েছে টিম বাংলাদেশ। অন্যদিকে খাদের কিনারা থেকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে ২১ রানে পরাজিত করা ইংলিশ শিবির উজ্জীবিত ও চনমনে। সব মিলিয়ে মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জমজমাট লড়াইয়ের আরেকটি মঞ্চ প্রস্তুত।
বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটি রোববার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে শুরু হবে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ও গাজী টিভি।
মিরপুরে শুক্রবার প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে জয়ের পথে থাকা বাংলাদেশ ১৭ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৮ রানে গুটিয়ে যায়। ফলে ২১ রানের হার নিয়ে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।
এতে রোববার মিরপুরে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। মাশরাফিদের লক্ষ্য যেখানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজে টিকে থাকা। অন্যদিকে ইংলিশদের লক্ষ্য টাইগারদের হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করা। ফলে রোববার দুই দলই যে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে সেটি চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায়।
বাংলাদেশ চাইলে গত বছরের জুলাইয়ের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি নিতে পারে। প্রায় ১৫ মাস আগে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটেই তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে প্রোটিয়াদের কাছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানের হার দিয়ে শুরু করেছিল মাশরাফির দল। সেবার কিন্তু দমে যায়নি টাইগাররা। দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৭ ও ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় নিশ্চিত করে মাশরাফির দল।
১৫ মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাশরাফিদের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা হয়েছিল মিরপুরেই। এবারও একই মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে টাইগাররা। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচটি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজের শেষ ম্যাচটি জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলবেন মাশরাফিরা। ফলে রোববার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে স্বাগতিকরা।
আজ মাশরাফিদের বাঁচা-মরার লড়াই
একাদশে নাসির ফিরলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আগের চেয়েও শক্তিশালী হবে। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস যদি ওপেনিংয়ে দারুণ ভিত গড়ে দিতে পারেন সেটির ওপর দাঁড়িয়ে দলকে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ এনে দেয়ার যোগ্যতা রাখেন সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। রান খরায় ভুগতে থাকা মুশফিকুর রহিমের কাছে দলের বড় একটি ইনিংস পাওনা রয়ে গেছে। নাসির একাদশে ফিরলে শেষ দিকে দারুণ ফিনিশিংয়ে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারেন।
মুস্তাফিজুর রহমান ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকলেও বোলিংয়ের ধার কমেনি বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে শফিউল ইসলাম শুরুটা দারুণ করলেও ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। শুরুতে এবং ডেথ ওভারে মাশরাফি বরাবরই কার্যকর। আগের ম্যাচটি খারাপ গেলেও তাসকিন স্লগ ও ডেথ ওভারে কার্যকর হিসেবে একাধিকবার নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তবে স্পিনে সাকিবকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারছেন না কেউ। সেটিই ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে।
অন্যদিকে জেসন রয়, জেমস ফিন্স, বেন ডাকেট, জনি বেয়ারস্টো, বেন স্টোকস, জস বাটলার ও মঈন আলি- সাত ব্যাটসম্যানকে নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড দল। আট নম্বরে টুকটাক ব্যাটিং করতে পারেন ক্রিস ওকসও। তিন পেসার জ্যাক বল, ডেভিড উইলি ও ওকসের সঙ্গে বোলিং আক্রমণে থাকবেন দুই স্পিনার আদিল রশিদ ও মঈন আলি। ফলে কঠিন চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।
টিম নিউজ-
বাংলাদেশ: ইমরুল কায়েস প্রথম ওয়ানডেতে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করায় রোববারের ম্যাচেও এই বাঁহাতি ওপেনারের সুযোগ পাওয়া নিশ্চিতই বলা যায়। তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করবেন ইমরুল। অন্যদিকে অফফর্মে থাকা সৌম্য সরকার একাদশের বাইরেই থাকবেন তাতে। গত ম্যাচে মোসাদ্দেক হোসেন ও মোশাররফ হোসেনের ব্যর্থতার কারণে দুজনের জায়গাই নড়বড়ে। ফলে এই দুজনের জায়গায় রোববার একাদশে ঢুকতে পারেন নাসির হোসেন ও আল-আমিন হোসেন।
আজ মাশরাফিদের বাঁচা-মরার লড়াই
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটিতে ফিনিশিং দেয়ার মতো যোগ্য কাউকে পায়নি বাংলাদেশ। সে কারণেই নাসিরকে একাদশে নেয়ার জোর দাবি উঠছে। নাসির একাদশে ফিরলে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পার্ট-টাইম স্পিনার হিসেবেও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন। সেই বিবেচনায় রোববারের ম্যাচে তাকে একাদশে ফিরিয়ে আনতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।
শুক্রবার একাদশে ছয়টি পরিবর্তন এনে মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড দল। তারপরও দারুণ জয় পায় দলটি। রোববারের ম্যাচে দলে কোনো পরিবর্তন আনার আভাস দেয়নি ইংলিশ টিম ম্যানেজমেন্ট। উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখতে চাইছে সফরকারীরা। প্রথম ওয়ানডেতে অভিষিক্ত পেসার জ্যাক বল ৫১ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের দারুণ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রথম ইংলিশ বোলার হিসেবে অভিষেক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন বল।
অন্যদিকে আরেক অভিষিক্ত বেন ডাকেট ৬০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দেন। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে মঈন আলি প্রথম ম্যাচে সফল না হলেও তাকে একাদশের বাইরে রাখার চিন্তাই করছে না ইংল্যান্ড। অন্যদিকে শুক্রবারের ম্যাচে ৪ উইকেট নেয়া আদিল রশিদ যথারীতি প্রথম একাদশে থাকবেন। ফলে লিয়াম ডাওসন, স্যাম বিলিংস ও স্টিভেন ফিন যথারীতি বেঞ্চেই থাকবেন।
প্রথম ম্যাচ জিতে ইংল্যান্ড মানসিকভাবে এগিয়ে থাকলেও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। ইংলিশ শিবির আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামলেও ছেড়ে কথা বলবে না মাশরাফির দল। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে প্রায় ২৫ হাজার দর্শকও থাকবেন মাশরাফি-সাকিবদের সঙ্গে। ঢাকার গরম ও স্বাগতিক দর্শকদের গগনবিদারী চিৎকার- সব কিছুই চ্যালেঞ্জ নিয়ে অপেক্ষা করছে ইংলিশদের জন্য। সব মিলিয়ে মিরপুরে আরো রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। শেষ হাসি কে হাসবে সেটাই দেখার বিষয়।
সম্ভাব্য একাদশ-
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোশাররফ হোসেন/নাসির হোসেন, শফিউল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ।
ইংল্যান্ড: জেসন রয়, জেমস ভিন্স, বেন ডাকেট, জনি বেয়ারস্টো, বেন স্টোকস, জস বাটলার, মঈন আলি, ক্রিস ওকস, ডেভিড উইলি, জ্যাক বল ও আদিল রশিদ।