রাজশাহী,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: শ্রদ্ধা ভালবাসা ও আবেগের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সনাতন ধর্ম মতে দেবী দুর্গা ‘বাবার বাড়ি বেড়ানো’ শেষে ফিরে গেলেন ‘কৈলাসের দেবালয়ে’। ঢাকের বাদ্য আর সিদুর খেলায় বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো হিন্দু সম্পদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব।
বিজয়া দশমীতে ‘বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনে’ দুর্গাপূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি হয়। মঙ্গলবার বিকেল থেকে শুরু হয় রাজশাহী মহানগরীর আশেপাশের এলাকার প্রতিমাগুলো বিসর্জন। বিসর্জন দিতে নিয়ে ভক্তরা আসেন নগরীর মুনুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের সামনে পদ্মা নদীতে। আর পবা উপজেলার বেশীরভাগ প্রতিমা বির্সজন দিয়েছে বারনই নদীতে।
জানা গেছে, বিকেল থেকেই এলাকার প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। এই এলাকায় রাজশাহীর মহানগরীর ছাড়া আশে পাশের এলাকার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। এ সময় নিজ এলাকায় লোকজন এসে তাদের প্রতিমা বিসর্জন দিচ্ছেন।
এবার রাজশাহীতে গত বারের চেয়ে বেশি প্রতিমা রয়েছে। সেই জন্য মধ্য রাত পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। প্রতিমা বিসর্জন দিতে আশা কার্তিক কুমার রাজু বলেন, ‘মা এসেছিলেন আমাদের শন্তির জন্য। তিনি আমাদের দুঃখ কষ্ট নিয়ে গেলেন। আর আমাদের সুখ-শান্তি দিয়ে গেলেন। তার কাছে সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলা থেকে সকলকে রক্ষা কামনা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মা প্রতি বছরের একবার আসেন। কয়েকদিনের জন্য অতিথি হয়ে। আজ মাকে বিসর্জন দিতে এসে খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরেও দিতে হবে কারণ মা বাবার বাড়ি বেড়ানো শেষে ফিরে গেলেন কৈলাসের দেবালয়ে।’
প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া দেখতে আসা রাধা রানী বলেন, ‘মা তো তার বাবার বাড়ি বেড়ানো শেষে ‘কৈলাসের দেবালয়ে’ ফিরে যাবেনই। তিনি আমাদের কষ্ট নিয়ে চলে যাবেন। কিন্তু রেখে গেলেন সুখ-শান্তি। তিনি সবার মঙ্গল কামনা করে গেলেন। তিনি এবার এসেছিলেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। আর গেলেনও ঘোটকে চড়ে।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের সদর সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়ের আলম জানান, এ বিসর্জনকে কেন্দ্র কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আশাপাশের এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ছাড়াও র্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিতা রয়েছে।
উল্লেখ্য, শারদীয় দুর্গোৎসবে রাজশাহীর নগরীর চারটি থানা ও জেলার নয়টি উপজেলার ৪২৫টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা এলাকায় ৫০টা সহ ৪টি থানায় এলাকায় ৭৬টি এবং জেলার নয়টি উপজেলায় ৩৫০টি মিলিয়ে রাজশাহী জেলায় ৪২৫টি স্থানের পুজা মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টির রাজশাহী অঞ্চলের সভাপতি অনিল কুমার জানান, রাত ৯টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব পূজামন্ডপে বলা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে এ কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
পবা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুনিল কুমার ঘোষ বলেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় এবারে ব্যাপক উদ্দীপনা ও আনন্দের মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন হলো। রাত ৯টার মধ্যেই উপজেলার সমস্ত প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে।