নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বিশ্বের উদীয়মান পরাশক্তি চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
শি জিনপিংকে দেখা হচ্ছে চীনের ইতিহাসে অন্যতম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট হিসেবে। দেশটির ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর লাগাম টেনে ধরেছেন তিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে তিনি প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তাসহ বহু রাঘববোয়ালকে ঘায়েল করেছেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের নেতা জিনপিং চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার (সিপিসি) মহাসচিব।
বিবিসি ও উইকিপিডিয়ার তথ্যের ভিত্তিতে তার জীবনালেখ্য তুলে ধরা হল –
শ্রমিক থেকে দেশনায়ক: শি জিনপিং ১৯৫৩ সালের ১৫ জুন বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিপিসির এক সময়ের শীর্ষস্থানীয় নেতা শি জোংশুনের দ্বিতীয় সন্তান। তার পৈতৃক নিবাস হেনান প্রদেশের তেংচু জেলায়। জিনপিংয়ের জন্মগ্রহণের সময় জোংশুন কমিউনিস্ট পার্টির প্রোপাগান্ডা বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং পরে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জিনপিংয়ের ১০ বছর বয়সে তার বাবা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ে রাজনৈতিক কোন্দলের শিকার হন এবং প্রতিহিংসাবশত বদলির ফলে হেনান প্রদেশের লুইয়াং শহরের একটি কারখানায় নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলে জোংশুন আবারও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন এবং গ্রেফতার হন। তখন জিনপিংয়ের বয়স ১৫। এ সময় জিনপিং মাও সেতুংয়ের ডাউন টু দ্য কান্ট্রিসাইড (গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা) কর্মসূচিতে অংশ নেন।
তবে ওই সময়ই শির প্রতিভার স্বতঃস্ফূর্ত স্ফুরণ ঘটে। দিনের বেলা কৃষকদের সঙ্গে কঠিন পরিশ্রম, রাতে তাদের পাশেই মাথার নিচে ইট দিয়ে ঘুমানো। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টের সন্তান হলেও তার সাধারণ জীবনাচরণ এবং সহজেই সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে খুব সহজেই। সে সময়ের এক গ্রাম্য প্রধান জিনপিংকে ‘সৎ এবং দায়িত্বশীল’ বলে অভিহিত করেন। পরবর্তীকালে জিনপিং নিজেও বলেছেন, কৈশোর ও তারুণ্যে তার এ কঠোর পরিশ্রমের অভিজ্ঞতাই তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শিক্ষা।
পরবর্তীতে বেইজিংয়ের বিখ্যাত তিনজুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন জিনপিং। চীনের সম্মানজনক এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিহিত করা হয় নেতৃত্ব নির্মাণের পাঠশালা হিসেবে। হু জিনতাওসহ চীনের অনেক শীর্ষনেতাই পড়াশোনা করেছেন এখানে।
জিনপিং জন্মস্থান ফুজিয়ান প্রদেশে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। পরে তিনি পার্শ্ববর্তী চেচিয়াং প্রদেশের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন জিনপিং। তবে এর আগে পরপর সাতবার খারিজ হয় তার আবেদন। মূলত পিতার অতীত রাজনৈতিক ইতিহাসই তার ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে ১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পরপরই দৃশ্যপট পরিবর্তিত হতে থাকে দ্রুত। রক্ষণশীলদের হটিয়ে চীনের নেতৃত্বের অগ্রভাগে আসেন সংস্কারপন্থীরা। এদের অনেকেরই আদর্শ পুরুষ ছিলেন জিনপিংয়ের পিতা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার রাজনৈতিক জীবন তরতর করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস।
রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে হেবেই প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে পরবর্তীতে ফুজিয়ান এবং ঝেজিয়াং প্রদেশে দলের আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। অবশেষে ২০০৭ সালে দুর্নীতির দায়ে চীনের গুরুত্বপূর্ণ সাংহাই নগরীর পার্টিপ্রধান চেন লিয়াংগুই পদচ্যুত হলে তার স্থলে নিয়োগ পান তিনি। এরপরই মূলত ভাগ্য খুলে যায় জিনপিংয়ের।
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের সুনজরে থাকার কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দলের স্থায়ী কমিটিতে জায়গা করে নেন তিনি। অবশেষে ২০০৮ সালে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদটি লাভ করেন তিনি। ২০১২ সালে তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত হন, যার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে আগামী এক দশক তিনিই চীনের নেতৃত্ব দেবেন। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি।
প্রশাসক হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ব্যাপারে তাকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে বিশ্বাসী বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে দক্ষতার জন্য তাকে অভিহিত করা হয় ‘ট্রাবল শুটার’ হিসেবে। ৯০ দশকের শুরুর দিকে ফুজিয়ান প্রদেশের দুর্নীতি ও অপরাধ চক্রের মূলোৎপাটন করে খ্যাতি লাভ করেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও এক কন্যা সন্তানের জনক জিনপিং। তার স্ত্রী বিখ্যাত চীনা লোকগীতি শিল্পী ও অভিনেত্রী পেং লিউয়ানকে প্রতি বছরই নতুন বছরের উৎসবে চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়। একই সঙ্গে তিনি চীনা সামরিক বাহিনীতে মেজর জেনারেল হিসেবেও কর্মরত।
কাজের বাইরে জিনপিংয়ের শখ সম্পর্কে অল্পই জানা সম্ভব হয়েছে। যতদূর জানা গেছে, বাস্কেটবল খেলতে পছন্দ করেন তিনি। পাশাপাশি ফাঁস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তারবার্তা অনুযায়ী হলিউডের যুদ্ধনির্ভর ছবিগুলো দেখতে পছন্দ করেন তিনি।