নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে ২৫টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হবে। আজ বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবস্থিত করবী হলে চুক্তিগুলো স্বাক্ষর হওয়ার সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। শি জিনপিং কম্বোডিয়া অবস্থান করার কারণে দেশটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সঙ্গে থাকায় সব চুক্তি এখনও পর্যন্ত চীনের চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। তবে ২৫টি চুক্তি ও এমওইউ এরই মধ্যে চীনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করে দেয়া হয়েছে। চীনের সঙ্গে এবার যত চুক্তি হচ্ছে তার অধীনে বাংলাদেশকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণের ঘোষণা দিতে পারেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের আওতায় ২৯টি প্রকল্পে ১৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেয়া হতে পারে। তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশে একটি তথ্য প্রযুক্তি প্রাণকেন্দ্র নির্মাণ খাতে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রকল্প রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির এই কেন্দ্রে চীনের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন। বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হল ঢাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও জোরদার করা। এই প্রকল্পে চীনের ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। চীনের অর্থনৈতিক কমিটি প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। ফলে এই প্রকল্পে অর্থায়নে চুক্তি হবে। পায়রায় একটি মেগা পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে চুক্তি হতে পারে। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৭৪ একর ভূমির ওপর চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষায়িত অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় চুক্তি হতে পারে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার চুক্তি সই হবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের চারটি পৃথক স্টেশন নির্মাণে অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা চুক্তি হতে পারে। সন্ত্রাস দমনে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের লক্ষ্যে পৃথক একটি চুক্তি সই হবে। চীনের সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নিজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত রোড অ্যান্ড বেল্টে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়টি। এই চুক্তির মাধ্যমে সমুদ্রপথে চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও ভারতের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে। এটাকে বলা হচ্ছে- একুশ শতকের মেরিটাইম সিল্ক রোড। শি জিনপিংয়ের রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের আওতায় বিশ্বের ৬৫টি দেশ চীনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
এছাড়াও, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, ভৌত অবকাঠামো, সড়ক সেতু, রেল ও জলপথে যোগাযোগ, কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতায় চুক্তি সই হচ্ছে।
এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে বলা হয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্টের সফরকালে ৩টি সমঝোতা স্মারক, ৪টি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট এবং ৩টি প্রকল্পে ঋণ চুক্তির বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তির আওতায় ২২টি প্রকল্পে সহায়তার জন্য প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এমওইউ স্বাক্ষর হবে। স্থানীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
সূত্র জানায়, চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হবে সেগুলো হচ্ছে- প্রজেক্ট অব ব্রিজ কনস্ট্রাকশন, প্রজেক্ট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এবং স্ট্রেনদেনিং ইনভেসমেন্ট অ্যান্ড প্রডাকশন ক্যাপাসিটি। এর মধ্যে স্ট্রেনদেনিং ইনভেসমেন্ট অ্যান্ড প্রডাকশন ক্যাপাসিটির আওতায় ২২টি প্রকল্প যুক্ত থাকছে। এছাড়া এগ্রিমেন্ট অন ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন ফর ওয়ান থাউজেন্ট মোটরসাইকেল অ্যান্ড ডিজাস্টার সেন্টার, প্রকিউরমেন্ট অব সিক্স ভেসেল, দাসেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের জন্য চারটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হবে। সেই সঙ্গে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প, সিক্স ভ্যাসেল এবং দাসেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ চুক্তি হবে।
যে ২২ প্রকল্পে সহায়তায় এমওইউ স্বাক্ষরিত হবে সেগুলো হল- ঢাকা-সিলেট ফোর লেন হাইওয়ে প্রজেক্টে ১৬০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভারমেন্ট-ফেজ-৩ প্রকল্পে ১৫ কোটি ডলার, ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রজেক্টে ৫০ কোটি ৪ লাখ ডলার, রাজশাহী ওয়াসার সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রজেক্টে ৫০ কোটি ডলার, সিস্টেম লস রিডুইসিং বাই রিপ্লেসিং ৫ মিলিয়ন ইলেকট্রো মেকানিক্যাল এনার্জি মিটার উইথ ইলেকট্রনিক্স এনার্জি মিটার প্রজেক্টে ১৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলার, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রজেক্টে ২০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার, পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক (ফেজ-১) প্রকল্পে ১৬৫ কোটি ৮৫ লাখ এবং পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক (ফেজ-২) প্রকল্পে ৯১ কোটি ৭১ লাখ ডলার, পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবিতে ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলার, কনস্ট্রাকশন অব ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার এবং মর্ডানাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকটিভিটি প্রজেক্টে ২০ কোটি ডলার।
এছাড়া কনস্ট্রাকশন অব এ ডিজি ট্রাক টু দ্য এক্সজিসটিং এমজি লাইন ইন জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সেকশন প্রজেক্টে ২৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, কনস্ট্রাকশন অব ডুয়েল লাইন বিটুইন জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন-এ ৭৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার। এস্টাবলিসিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি প্রজেক্টে ১০০ কোটি ডলার, কনস্ট্রাকশন অব মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে অ্যান্ড কোস্টাল প্রটেকশন ওয়ার্কস ফ্রোম সীতাকুণ্ড-চিটাগাং-কক্সবাজার প্রজেক্টে ২৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, এক্সপানশন অ্যান্ড মর্ডানাইজেশন অব মংলা পোর্ট ফ্যাসিলিটিজে ২৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পে ২৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, গজারিয়া ৩৫০ মেগাওয়াট কোল ফায়ারড থার্মাল পাওয়ার প্লান্টে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার, কনভারশেসন অব এমজি রেলওয়ে ট্র্যাক ইন টু ডিজি রেলওয়ে ট্র্যাক ইন আখাউরা-সিলেট সেকশন অব বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার, প্র-প্রেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর বিপিডিবি’স ডিস্ট্রিবিউশন জোনস প্রজেক্টে ৫২ কোটি ১৫ লাখ ডলার, কনস্ট্রাকশন অব নিউ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো প্রজেক্টে ২০ কোটি ডলার, রিপ্রেসমেন্ট অব ওভারলোডেড ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ফর প্রোভাইডিং রিলায়েবল ইলেকট্রিসিটি ইন আরই সিস্টেম প্রজেক্টে ২৩ কোটি ৫ লাখ ডলার, ওয়াটার সাপ্লাই-স্যানিটেশন ড্রেনেজ অ্যান্ড সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ফর স্মল পৌরসভা প্রজেক্টে ১৫ কোটি ডলার এবং ব্যালেন্সিং মর্ডানাইজেশন রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড এক্সপানশন অব দ্য পাবলিক সেক্টর জুট মিলস অব বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন প্রজেক্টে ২৮ কোটি ডলার সহায়তা।