নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: দুর্ঘটনায় প্রতিদিন প্রাণ যাচ্ছে। সড়কে মৃত্যুর ঘটনা এখন স্বাভাবিক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এর দায় সবাইকে নিতে হবে। দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন সবার সচেতনতা। এজন্য যার যা দায়িত্ব সেটাই পালন করতে হবে।
রোববার সকাল ১০টায় যুগান্তর, যমুনা টিভি ও নিসচার উদ্যোগে আয়োজিত ‘সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে দায় কার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে আসে।
সড়কে এখন এক প্রকার গণহত্যা চলছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে.জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, গণহত্যা একটি শক্তিশালী শব্দ। কিন্তু এখন যেভাবে প্রতিদিন মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে তাতে এক প্রকার গণহত্যাই চলছে।
সড়ক দুর্ঘটনাকে জাতীয় সমস্যা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি দায় সরকারের। সরকারকে এর দায় নিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসা উচিত।
সাবেক সেনাপ্রধান লে.জে (অব.) মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, গাড়ি চালকরা যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে সে ট্যাংক চালাচ্ছে। সে যুদ্ধে নেমেছে। যেন ঘোষণা করছে, সামনে থেকে সরো, না হয় পিষে ফেলব। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য তাদের সচেতন করতে হবে। রাস্তা পার হওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।
যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে বৈঠকে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, জাতীয় কোনো নেতার কাছ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে কথা শুনি না। সড়ক দুর্ঘটনার মতো জাতীয় সমস্যার বিষয়ে তারা সোচ্চার হচ্ছে না, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সচিব বদিউর রহমান বলেন, ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেয়া নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়।
তিনি বলেন, গাড়ি কেনার পর সড়ক দুর্ঘটনা মারা যেতে পারি-এটা জেনে নিয়েই গাড়ি কিনেছি। তাছাড়া রাস্তায় পুলিশের হাতে নাজেহালের আশংকাও জানি। এসব বন্ধ করতে হবে।
তিনি বিআরটিএ ও সড়কে নিয়োজিত আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন অনিয়মের সমালোচনা করেন।
বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুবে রাব্বানী বলেন, ২০১২ সালের পর থেকে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে। তিনি জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও ঘনবসতি ইত্যাদির কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে উল্লেখ করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, দুর্ঘটনার জন্য দায় চালকের। তাদের ওভারটেকিং প্রবণতা, অদক্ষতা ও বেপরোয়া গতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও আইন না মানার প্রবণতার জন্যই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হচ্ছে।
রাজধানীতে সড়কে নিহতদের বেশিরভাগই পথচারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পথচারীদেরও সচেতনতা জরুরি।
তিনি লাইসেন্সবিহীন কোনো ড্রাইভারের হাতে গাড়ি না তুলে দেয়ার অনুরোধ জানান।
যমুনা টিভির প্রধান সম্পাদক নাজমুল আশরাফ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়েছে খুব কম। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জরিপ হয়। সংবাদমাধ্যমেও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যান রয়েছে। যে কোনও হিসেবেই হোক সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানুষ নিহত হন তা অন্য কোনো ক্ষেত্রে হলে ব্যাপক প্রভাব পড়ত। কিন্তু এখন সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি স্বাভাবিক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, যুগান্তর শুধু সংবাদ মাধ্যম নয়। আমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমও করে থাকি। আজকের এই অনুষ্ঠান তারই ধারাবাহিকতার অংশ।
তিনি বলেন, সড়কে যে জীবন যাচ্ছে তা আমরা ফিরে পাচ্ছি না। এটি দুর্ঘটনা নয় হত্যাকাণ্ড।
চালক ও পথচারীদের সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে সাইফুল আলম বলেন, প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি দিন নির্দিষ্ট হওয়া উচিত যেদিন দেশের কোথাও কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে না। এভাবে কিছুদিন পর সপ্তাহে দুইদিন, তিনদিন… আস্তে আস্তে ক্রমান্বয়ে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমানো যেতে পারে।
যুগান্তরের উপ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতনের সঞ্চালনায় আয়োজিত বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. একেএম শাহনেওয়াজ, প্রয়াত-প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক মিশুক মনিরের স্ত্রী মঞ্জুলী কাজী, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, পরিবহন নেতা হোসেন আহম্মেদ মজুমদারসহ সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা।