মনোহরদী (নরসিংদী),বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: নানা অনিয়ম আর সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থা, ডাক্তার ও সেবিকাদের দায়িত্বহীনতার কারণে রোগীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
একমাত্র সরকারী এই হাসপাতালটিতে মাত্র চারজন ডাক্তার দিয়ে প্রায় তিন লাখ লোকের চিকিৎসা চলছে। সম্প্রতি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন ৩শ-৪শ রোগী এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসকরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করায় অনেকেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়ে হচ্ছেন।
এ হাসপাতালে বিশ জন চিকিৎসকের মধ্যে চারজন অন্যত্র বদলী হওয়ায় কাগজপত্রে ১৬ জন চিকিৎসক থাকলেও দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৪-৫ জন। চার জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কর্মরত থাকলেও তারা সপ্তাহে ৩ দিন ঢাকা থেকে এসে স্বাক্ষর করে ঘন্টা খানেক পর আবার চলে যান।এ সকল অনিয়মের পিছনে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। ব্যবস্থাপনা খাতে দূর্বলতা আর সরলতার সুযোগ নিয়ে কর্মরত চিকিৎসকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন প্রাইভেট বানিজ্যে।মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধিকাংশ চিকিৎসক কোন না কোন প্রাইভেট ক্লিনিকের সাথে জড়িত আছেন। সকালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান ওইসব ক্লিনিকে।
সেখানে তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে কর্মরত এক চিকিৎসক দম্পতি বাইরের কয়েকজনকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটের সামনেই ‘মনোহরদী সেন্ট্রাল হাসপাতাল’ খুলে রোগী দেখছেন। এ ছাড়াও ওই হাসপাতালের মালিকের নিজস্ব ‘তাজ হাসপাতাল’ নামের প্রাইভেট আরেকটি হাসপাতাল থাকায় অফিস সময়ে সেখানে গিয়েও অপারেশনসহ রোগী দেখার অভিযোগ রয়েছে।ডা. মোনামিন জেমী সরকারী হাসপাতালের পার্শ্বে ‘লাইফ কেয়ার ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার’ এর সাথে যুক্ত থাকায় সরকারীভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে ওই সেন্টারে গিয়ে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখেন। হাসপাতালে সকল পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য রোগীদের অহেতুক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ওই সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই চিকিৎকের বিরুদ্ধে।সরকার প্রদত্ত ওষধপত্র ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগত রোগীরা। সরকারী হাসপাতালটি দিন দিন নোংরা, অপরিস্কারসহ সবগুলো টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতেই দুগর্ন্ধের কারণে রোগী ও তাদের স্বজনদের নাকে কাপড় চেপে চলাচল করতে হয়। এছাড়াও অত্যন্ত নিম্ন মানের খাবার দেয়ার অভিযোগও রয়েছে ভর্তি থাকা রোগীদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডাক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মনোহরদী সরকারী হাসপাতালের এ অবস্থার উন্নতি না হলে আগামীতে এইঅঞ্চলের রোগীরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।গাইনী চিকিৎসা নিতে আসা আম্বিয়া বেগম নামের এক রোগী বলেন, সকাল ৯ টায় হাসপাতালে টিকেট কেটে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু দুপুর ১ টায় পর্যন্ত কোন ডাক্তার দেখাতে পারিনি।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শফীকুল আলম বলেন, ডাক্তারদের বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ পেয়েছি। শিগগিরই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। আর অন্যান্য যে, অভিযোগ রয়েছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।