নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: নারী ক্ষমতায়নের জন্য নিরাপদ নগর বির্নিমাণে নারীবান্ধব পরিকল্পনা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিজ্ঞজন। তারা বলেন, রাস্তায়, ফুটপাতে, গণপরিবহনে, পার্কে, মার্কেটে হেন কোনো জায়গা নেই যেখানে নারী বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে না পরে। প্রতিবাদ করা যায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযোগে অনীহা কারণ তারাও জেন্ডার সেনসিটিভ না। শহরের বস্তি এলাকায় নারীর প্রতি বৈষম্য কয়েকগুণ বেশি বলে মন্তব্য করেন তারা। অ্যাকশন এইডের এক গবেষণায় দেখা যায়, যানবাহনে চলাচলকারী ৮৪ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। এমন অবস্থায় নারী ক্ষমতায়নে সরকার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সিটি কর্পোরেশনসহ সকল মহলের সম্মিলিত কার্যক্রম জরুরি বলে মন্তব্য করেন তারা।
গত রবিবার রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনটি গবেষণার ভিত্তিতে আলোচনাকালে এমন মন্তব্য করেন তারা।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীরের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবীর, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেইন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিকল্পনা পরিচালক ড. তারেক বিন ইউসুফ।
সেমিনারে বেশ কয়েকটি ভিডিও চিত্র ও গবেষণা উপস্থাপন করে বলা হয়, নারীদের জন্য নিরাপদ যানবাহন ব্যবস্থা খুব প্রয়োজনীয়। কারণ আমাদের কর্মজীবী নারীদের বেশিরভাগই গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। কিন্তু এই যানবাহনে চলাচল তাদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেইন বলেন, আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে ৬ মাসের মধ্যে যানবাহন সমস্যা সমাধান করা যায়। তিনি প্রশ্ন করেন, যদি ক্যান্টনম্যান্ট এলাকায় কোনো অব্যবস্থাপনা না হয় তবে তেমন পদক্ষেপ নিলে সর্বত্রই অব্যবস্থাপনা রোধ করা সম্ভব। তিনি গণপরিবহনের স্বল্পতার প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ের গাড়িগুলোকে নির্ধারিত সময়ের পরে না বসিয়ে রেখে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহারের কথা বলেন। তিনি বলেন, গাড়ির মালিকদের ৮০ শতাংশ অভিভাবক স্কুলে বাচ্চা পৌঁছে দেয়ার জন্য গাড়ি ব্যবহার করেন। কিন্তু বাচ্চাদের নিরাপদ যানবাহন নিশ্চিত করতে পারলে রাস্তায় অনেক গাড়ি কমে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশননে নারীবান্ধব করে পার্ক হচ্ছে, এগুলো নির্মাণে নারী ও মানবাধিকার কর্মীদের মতামত গ্রহণ করা হবে।
ফারাহ কবীর বলেন, যানবাহনে চলাচলকারী অধিকাংশ নারীকে প্রতিনিয়ত নানান ভীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এসব ঘটনা কর্মজীবী নারীদের কাজের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। প্রভাব ফেলে ব্যক্তি জীবনেও। তিনি বলেন, নারীদের বিনোদনের সুযোগ কম। বস্তি এলাকায় নারীরা পানি, পয়ঃনিষ্কাশন গ্যাস প্রভৃতি সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু তারা সার্ভিস চার্জও দেন। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি।
খুশি কবীর বলেন, নগরকে নারীবান্ধব করতে হলে অবশ্যই মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। এছাড়া সব পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও নগর কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে। নগরকে নারীবান্ধব করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অবশ্যই নারীকে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে দিতে হবে। যানবাহনে নারীরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ড.তারেক বিন ইউসুফ বলেন, সিটি কর্পোরেশন অনেক নারীবান্ধব টয়লেট করেছে। আরো করবে। তবে বস্তি এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বলে তাদের সরাসরি কোনো সেবা দেয়ার এখতিয়ার নেই। তবে তারা উন্নয়ন সংস্থার সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বস্তিবাসীর জীবন মান উন্নয়নে কাজ করেন।