নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: প্রতিবছরই শীতে গ্যাসের চাপ কম থাকে। উত্পাদন বাড়ালেও কারিগরি ত্রুটির কারণে এবারে আগেভাগেই সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে তীব্র গ্যাস সংকটে পড়েছে রাজধানীবাসী। এ সংকট সমাধানে তিতাসের কাছে নেই কোনো সহজ উত্তর। তবে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হতে দুই মাস সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে গ্যাস সংকটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তিতাস গ্যাসের জরুরি ফোন নম্বরে কল করে প্রতিদিনই গ্রাহকরা এ সংক্রান্ত অভিযোগ করছেন। গ্যাস সংকটে বেশি ভোগান্তি আছেন- মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, কাজীপাড়া, ইন্দিরা রোড, গ্রিন রোড, কলাবাগান, শুক্রাবাদ, কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর, রাজাবাজার, মগবাজার, মালিবাগ, তেজকুনিপাড়া, পশ্চিম রামপুরা, বাসাবো, আরামবাগ, আর কে মিশন রোড, টিকাটুলি, মিরহাজিরবাগ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, উত্তরা, জাফরাবাদ, লালবাগ, কেরানীগঞ্জের বাসিন্দারা।
রাজধানীর উত্তরায় থাকেন নাহার সুলতানা। একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন তিনি। তবে গ্যাস সংকটের কারণে বেশিরভাগ দিন সকালেই নাস্তা না করে অফিসে ছুটতে হয়। গ্যাস সংকট নিয়ে তিনি বলেন, গ্যাস না থাকায় বেশিরভাগ সময় সকালের নাস্তা বানানোর সুযোগ পাই না। ফলে বাইরে নাস্তা করতে হয়। প্রতিদিন বাইরে নাস্তা করাটা বেশ ব্যয়বহুল ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত আর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। ফলে রাতের খাবার খেতেও অনেক দেরি হয়।
মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের বাসিন্দা রেহানা আক্তার বলেন, দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত খুব অল্প গ্যাস থাকে। তাতে কেবল ভাত রান্না করা যায়। আর রাতে ১০টার পর গ্যাস পাওয়া যায়। ফলে সময় মতো খাওয়া-দাওয়া করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাস কোম্পানি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে রুটিনমাফিক সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। তখন এতে কিছু কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। গত ৯ ডিসেম্বর ওই সংস্কার কাজ চলায় জাতীয় গ্রিডে অন্তত ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যায়নি। ওই ত্রুটি এখনও পুরোপুরি সারানো যায়নি। ফলে গ্যাসক্ষেত্রটি থেকে দৈনিক প্রায় ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম উত্পাদন হচ্ছে। তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের একটি কূপেও কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
এছাড়া শীতে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। বিশেষ করে গৃহস্থালিতে তাপবৃদ্ধি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য গরম পানির ব্যবহার বাড়ে। আবার সঞ্চালন ও বিতরণ পাইপগুলোর অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ ও পুরনো। শীতকালে ময়লা ও গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট জমে পাইপগুলো সরু হয়ে পড়ে। সবমিলিয়ে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়া সম্প্রতি সার কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ কিংবা কমিয়ে দিয়ে শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়। কিন্তু এখন সার কারখানাগুলোতে সরবরাহ দেয়ায় শিল্পে গ্যাস সরবরাহ কমেছে।
ঢাকাসহ এর আশপাশের অন্তত ১৪টি জেলায় গ্যাস বিতরণ করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান জানান, চাহিদার চেয়ে এমনিতেই আমরা গ্যাসের জোগান পাই কম। তাই বিতরণেও ঘাটতি থাকে। শীতকালীন চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু উত্পাদন সে অনুপাতে বাড়েনি। বরং সম্প্রতি বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়ায় দৈনিক ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই বিতরণ পর্যায়েও ঘাটতি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।