নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: ইন্টারনেট দূষণ থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম সুরক্ষার প্রথম ধাপে পর্নমুক্ত হতে চলেছে বাংলাদেশ।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে হোস্ট করা ৫০০টি পর্ন ওয়েবসাইট। এই তালিকা হালনাগাদ করতে কাজ করছে বিটিআরসি। এর ফলে নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা পর্ন সাইটগুলোও এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএ হাকিম ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিটিআরসি’র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের আদেশক্রমে আজ আমরা সকল মোবাইল ফোন অপারেটর, ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানি, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে, আন্তর্জাতিক গেটওয়ে, আন্তসংযোগ এক্সচেঞ্জ, এনটিটিএনসহ সবাই জাতীয় স্বার্থে এই আদেশ পালন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ডোমেইন ধরে ধরে সাইটগুলো বন্ধ করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে এমএ হাকিম বলেন, ‘এটা অনলাইন শুদ্ধ অভিযানের প্রথম পদক্ষেপ বলতে পারেন। তাই ওয়েবে অনেক সময় বিভিন্ন সাইট ভিজিট করতে গিয়ে যে আপত্তিকর কনটেন্ট দেখা যায়, তা বন্ধের দাবি থাকলেও প্রাযুক্তিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এটা কনটেন্ট ধরে ধরে করতে হয়। আমরা সেটাও করার চেষ্টা করছি।’
জানা গেছে, তালিকায় থাকা ৫০০ পর্ন সাইটের মধ্যে দেশের মধ্য থেকে হোস্ট করা সাইটের সংখ্যাই বেশি। তবে কিছু বিদেশি সাইটও তালিকায় রয়েছে।
এদিকে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন, পর্ন সাইট ব্যবহারকারীদের পরিচয় প্রকাশ করা নয় বরং কিভাবে এর ব্যবহার কঠিন করা যায় সেই চেষ্টাই সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে। অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্ন সাইট কিভাবে বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ নভেম্বর তারানা হালিম বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটিই সাইটের তালিকা প্রণয়নসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় তদারকি করছে।
প্রসঙ্গত, ১৮ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার নিজের ফেসবুক পেজে এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে পর্ন সাইট বন্ধ হচ্ছে’।
এম এ আমিন খান নামের এক ব্যক্তি তারানার একটি পোস্টের নিচে কমেন্ট করেন, ‘আপা, পর্নোগ্রাফির সাইটগুলো বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে আপনারা আইন করেছেন। এখন এসব সাইটগুলো বন্ধ করাটাও খুব জরুরি। যুব সমাজকে পর্নোগ্রাফির ছোবল থেকে রক্ষা করতে না পারলে তাদের কাছে তথ্য-প্রযুক্তির সুফল পৌঁছাবে। তার এমন মন্তব্যের জবাবে তারানা হালিম পর্ন সাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও একদিন পর তার ওই কমেন্ট আর ফেসবুকে পাওয়া যায়নি।
তারানা হালিমের এমন ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এরপর এটি নিয়ে সরব হয় গণমাধ্যমও। তবে প্রশ্ন দেখা দেয়, এটি বন্ধ করা আদৌ সম্ভব কি না।
আসলে পর্ন সাইট বন্ধ করা সম্ভব কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য প্রযু্ক্তি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ব্রেকিংনিউজকে বলেন, অনলাইনে কোনও সাইট বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। কোনও সাইট সরাসরি বন্ধ করে দিলেও প্রক্সি সার্ভারের মাধ্যমে তা ব্যবহার করা যায়। এই প্রক্সি সার্ভার বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর সারাদেশে ফেসবুক বন্ধের উদাহরণ টেনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই সময় ফেসবুক-ভাইবার-হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের কয়েকটি মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। তারপরেও কিন্তু প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করেছেন।
এদিকে গত বছরের ৩০ জুলাই ভারত সরকার ইন্টারন্টে সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) সংগঠনকে পর্ন সাইট বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী ১ আগস্ট ৮৫৭টি সাইট ব্লক করে দেয় বন্ধ করে দেয় আইএসপি। বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি এইচ এল দাত্তু এক রায়ে বলেন, নিজের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে বসে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের পর্নগ্রাফি দেখার মৌলিক অধিকার রয়েছে। এরপরেও কেন নিষেধাজ্ঞা? পরে প্রায় ৭০০টি পর্ন সাইটের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় দেশটির টেলিকম মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র শিশু পর্নোগ্রাফি ও ব্লু ফিল্মের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।