লক্ষন বর্মণ,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার ৪৭নং গলগলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুকিপুর্ন ভবন সংস্কার না হওয়ায় শিশুশিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। অজপাড়া গায়ের এই স্কুলটির বেহাল দশার কারনে দিন দিন ঝড়ে পড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের গ্রামীন শিক্ষা নিয়ে নানা উন্নয়ন কার্যক্রম। এলাকাবাসী ও পরিচালনা কমিটি বার বার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি চালাচালি করেও কার্যকর কোন সুফল পাননি। অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা কর্মকর্তাদের অবৈধ চাহিদা পুরনে ব্যর্থ হওয়ায় ঝুকি নিয়ে আজও স্কুলটিতে পাঠদান চলছে।
এলাকা ঘুরে জানা যায়, একসময় শুধুমাত্র নৌ যোগাযোগ সমৃদ্ধ প্রত্যন্ত অঞ্চল গলগলিয়া গ্রামে ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই স্কুলটি। প্রায় ৮৭ বছর আগে শিক্ষা বান্ধব বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা কালিপদ চক্রবর্তী ও ভাওয়াল রাজার বংশধর উপেন্দ্র রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি টিনের ঘরে শুরু হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। তৎসময় ওই গ্রামটিতে শিক্ষার আলো প্রজ্বলিত করতে শিক্ষা সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে দেশরতœ কালিপদ চক্রবর্তী ওই অঞ্চলে প্রথম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীর উদ্যোগ গ্রহন করেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করেন সাবেক সেনাপ্রধান, সাবেক সচিব সহ বহু শিক্ষানুরাগী ও গুনীজন। এখনও অনেকেই দেশে-বিদেশে উচ্চ শিখরে অবস্থান করছেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে এরশাদ সরকারের শাসনামলে সরকারী উদ্যোগে ঠিকাদারের ব্যপক দুর্নিতীর মাধ্যমে নির্মিত হয় একটি ভবন। নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরী করা ভবনটি নির্মানের কিছুদিনের মধ্যেই খসে পড়তে থাকে প্লাস্টার ও দরজা-জানালার পাট। এর পর কেটে যায় ৩৬টি বছর। মানে তিন যুগেরও বেশী সময়। ইতিমধ্যে ২০১৪ সালে কালবৈশাখী ঝড়ে দির্ঘদিনের স্মৃতি বিজড়িত টিনসেড ঘরটিও লন্ড-ভন্ড হয়ে যায়। জরাজীর্ন ভবনে পাঠদান নিয়ে একাবাসী,অভিবাবক ও কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করে চরম আতংক। স্কুলটির এ দুর্দশার চিত্র তোলে ধরে একাধিকবার অবিবাবক ও ম্যানেজিং কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত দরখাস্ত করেনে। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আপদকালীন তহবিল থেকে স্কুলটি মেরামতের আশ্বাস দেন। কিন্তু আশ্বাস শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রয়ে যায়। তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি স্কুলটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় পরিদর্শকরাও পাশ্ববর্তী পোড়াদিয়ায় বসে স্কুল ভিজিটের কাজ শেষ করে চলে আসেন বলে অভিযোগ করেন কমিটি। প্রতিনিয়ত ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহন কালে ক্লাসরুমে নানা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন বলেও জানান তারা। আর এ আংতকের ফলে প্রতি বছরই ঝড়ে পড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ব্যহত হচ্ছে সরকারী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শিক্ষা কার্যক্রম। জরুরী ভিত্তিতে ঝুকিপর্ন ভবনটি ভেঙ্গে নুতন ভবন নির্মিত না হলে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এছাড়া এই প্রত্যন্ত এলাকায় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় চরম বিপর্যয় নেমে আসবে।
এব্যপারে বেলাবো উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শামসুল হক বলেন, আমি গত তিন মাস পুর্বেও ওই স্কুলটিতে গিয়েছিলাম। এতটা খারাপ অবস্থা বলে আমার জানা নেই। তবে এর আগে একবার কিছুটা মেরামত করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের লিখিত ভাবে জানানো হবে।