নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রী সভায় অনুমোদিত ‘প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইন’ বিলটি পাস হলে নতুন করে অনেকেই রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়তে পারেন। বিশেষ করে র্উদুভাষী বাংলাদেশি, যারা ২০০৮ সালে হাইর্কোটের রায়ের মাধ্যমে নাগরকিত্ব পেয়েছেন। এই প্রস্তাবিত আইনটি বহু মানুষকে নাগরিক অধিকার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতে পারে। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে কাউন্সিল অব মাইনোরিটিজ আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইন শীর্ষক’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনার শুরুতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কাউন্সিল অব মাইনোরিটিজের প্রধান নির্বাহী খালিদ হোসেন। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম, ইউএসপিওয়াইআরএম’র সভাপতি মো. সাদাকাত খান ফাক্কু ও নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী ও কাউন্সিল অব মাইনোরিটিজের সভাপতি জাকির হোসেন, উর্দুভাষী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান খান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বহু মানুষ রাষ্ট্রহীনভাবে রয়েছে। নতুন করে আর কেউ যেন রাষ্ট্রহীন না হয় সেটি সরকারকেই দেখতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নাগরিকত্ব আইন ১৯৫১, এবং বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) আদেশ ১৯৭২, আমাদের দেশে নাগরিকত্বের বিষয় নির্ধারণ করে বর্তমানে বিদ্যমান আছে। বিদ্যমান আইনের ইতিবাচক দিক হলো, এতে শ্রেণিবিভাজনের ভিত্তিতে নাগরিকের অধিকারের ভিন্নতা রাখা হয়নি। একই সঙ্গে এতে নাগরিকত্ব বাতিলের কোনো বিধানও নেই। দুর্ভাগ্যবশত প্রস্তাবিত খসড়ায় এই দুটি বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে বিদ্যমান আইনী সুরক্ষার বিচারে পশ্চাৎপদ।
বক্তারা আরও বলেন, প্রয়োজনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও বেসরকারি এনজিও গুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে খসড়াটি সঠিকভাবে তৈরি করতে হবে। উর্দুভাষীরা জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। কোনভাবেই তাদের অবহেলা করা যাবে না এবং প্রবাসীদের সন্তানরা যাতে এই আইনে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। কেননা তারা আমাদের বংশধর। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে বিদ্যমান নাগরিকত্ব আইনের সংস্কার আনা জরুরি। তবে আইনের যে খসড়াটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে, তা দুর্ভাগ্যবশত সুচিন্তিত ও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কিছুসংখ্যক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রহীনতার ঝুঁকিতে ফেলে যে খসড়াটি দেওয়া হয়েছে তা আমাদের সংবিধানের পরিপন্থী। তাই সংসদে আলোচনার আগে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে খসড়াটি পুনর্বিন্যাস করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের সকল নাগরিককে রাষ্ট্রহীনতার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে খসড়া আইনটি সংশোধন করার জন্য অহ্বান জানান তিনি।