বান্দরবান,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম বান্দরবানে সরকারি হাসপাতালের সেবা মিলছে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। কাগজে কলমে সরকারি ডাক্তার হলেও চিকিৎসা সেবার জন্য প্রাইভেট ক্লিনিকের দারস্থ হওয়ার পরার্মশ দিচ্ছেন ডাক্তাররা অভিযোগ রোগীদের।
সদর হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসকরাই প্রাইভেট ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ।১০০ শয্যা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতালের দৌরাত্বকেই প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা এছাড়াও কর্তৃপক্ষের চরম দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতির কারণেই রোগীরা সেবা বঞ্চিত থাকছেন বলে মনে করেন কেউ কেউ।
মূল্যবান ওষুধপত্র বাইরে পাচারেরও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিনা ছুটিতেই বেশিরভাগ চিকিৎসক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। চিকিৎসকদের নাকি হাত লম্বা এবং শক্ত সংগঠন আছে-তাই গণমাধ্যমে প্রকাশ করেও কোন লাভ নেই, যেনতেন ভাবেই চলছে চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ড, এসব দম্ভোক্তি এ হাসপাতালে নিয়োজিত কয়েকজন চিকিৎসকের।
সম্প্রতি জেলা সদরে ২টি বেসরকারি মিনি হাসপাতাল চালু হওয়ার পর থেকেই মূলত সরকারি সদর হাসপাতালের কিছু চিকিৎসকের পোয়া বেড়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা। বান্দরবানে গড়ে ওঠা দুইটি বেসরকারি মিনি হাসপাতাল হিলভিউ ও ইমানুয়েল এ দিন রাতে টাকার লোভে পড়ে থাকেন ডাক্তারা।
তবে সম্প্রতি এ সদর হাসপাতালের ব্যাপক দুর্নীতিসহ চিকিৎসকদের দায়িত্বে চরম অবহেলা সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর জেলা প্রশাসকের টনক নড়ে। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়েই একটি তদন্ত দল গঠন করেছেন ৫ সদস্যের। কমিটির সদস্যবৃন্দ অবশ্য এখনও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি।
জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে সদর হাসপাতাল খোলা মাত্রই শিশুসহ নারী-পুরুষ চিকিৎসার্থে যান। রোগীদের স্বজনরা কোন চিকিৎসককে কর্মস্থলে না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হন।
চিকিৎসা নিতে আসা রোকেয়া বেগম জানান প্রাইভেট ক্লিনিক চালু হওয়ার কারণে সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান এমন হয়েছে ডাক্তার রা ওখানে বেশি সময় দেন। কিছু বললে বলে ভাল না লাগলে ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নেন। আমরা গরীব মানুষ তাই বাধ্য হয়ে এখানে পড়ে থাকি যাদের টাকা আছে তারা ক্লিনিকে চলে যায় বলে জানান রোগীরা।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে- ৩৩ ও ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষা শেষে একযোগে ৩৮জন চিকিৎসককে বান্দরবান জেলায় নিয়োগ দেয়া হলেও তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা-তদবিরের মাধ্যমে কথিত প্রশিক্ষণ বা ভাল জায়গায় পোষ্টিং নিয়ে চলে যায় ৬মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই। বিধিমতে পোষ্টিং পাওয়া কর্মস্থল থেকে ২বছরের মধ্যে কোনভাবেই অন্যত্র বদলির সুযোগ নেই এবং কর্মস্থলে থাকাটা বাধ্যতামূলক মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সু-ষ্পষ্ট নিদের্শনা রয়েছে। পার্বত্য জেলা পরিষদের অক্ষমতার সুযোগ নিয়ে বিধিলঙ্ঘন করেই পোষ্টিং প্রাপ্ত চিকিৎসকের বেশিরভাগই অন্যত্র বদলির আদেশ নিয়ে ইতিমধ্যেই চলে গেছেন বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতালের কার্য তালিকা মতে প্রতিদিন গড়ে ৮জন মেডিকেল অফিসার এবং ৫জন কনসালটেন্ট উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে জরুরি বিভাগে ১জন, বহির্বিভাগে ১জন এবং আন্তবিভাগে ১জন করে চিকিৎসককে উপস্থিত দেখা যায়।বিগত দিনে শিশু চিকিৎসক হিসেবে একজন ডাক্তার থাকলেও তিনি বদলীর পর আর কোন ডাক্তার র্কমস্থলে আসেননি। একসাথে ৭চিকিৎসকের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে কর্মকর্তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির জন্যে সাময়িক সমস্যা সৃষ্টির কথা স্বীকার করেন।
বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডা. উদয় শঙ্কর চাকমা জানান, বান্দরবানে চিকিৎসকের তীব্র সঙ্কট রয়েছে কোন ডাক্তারই এখানে বেশি দিন থাকেন না। দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় ডাক্তারদের বাইরে প্র্যাকটিস করার সুযোগ না থাকায় তারা অন্যত্র চলে যায়। বিষয়টি তিনি বহুবার উপর মহলে জানিয়েছেন তাতে কোন ফল হয়নি ডাক্তার আসে আবার চলে যায়। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানে আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের মাধ্যমে ডাক্তার নিয়োগের কথা জানান তিনি।